অনুপম নিয়োগীর কবিতা

 



অনুপম নিয়োগীর কবিতা


    আটের দশকের শেষের দিকে জন্ম অনুপমের, কবিতা লেখা শুরু ২০১০ থেকে। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত, পুরুলিয়ার অধিবাসী অনুপম নিয়োগী। লিখেছেন কাগজের ঠোঙ্গা, বান্ধবনগর, নাটমন্দির, ঘাট, উজানস্রোত, শঙ্খচিলের ভাষা, কবিতা টার্মিনাস, সোনাঝুরি, পাখিরার মতো বাংলার উল্লেখযোগ্য ছোটো-বড়ো একাধিক পত্রপত্রিকায়। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া খনি অঞ্চল থেকে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশিত 'বায়স' পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত। আমরা আশা করি অনুপম খুব দ্রুত তার প্রকাশিত একটি বই আমাদের উপহার দেবেন। 



কবিতা


যাত্রী

 

ওঠা আর নেমে যাওয়ার

মাঝে রেখে গেলাম

আমার খসে পড়া পালক,

রাতের নির্জন স্টেশন

তুমি তাকে রেখে দিও

   তোমার আত্মজীবনীতে ।

 

 

 


সমুদ্র

 

অনেক ভাঙা গড়ার পর

এসে দাঁড়াই তোমার কাছে

আলো আর আঁধারের মাঝে

নিরন্তর বয়ে চলে জীবন,

তরঙ্গ ওঠে,

তরঙ্গ মিলিয়ে যায় কোথায়...





সন্তান

 

তার স্পর্শটুকু সরে গেলে

পড়ে যাই জলের গভীরে

মায়াবি দিনের পাশে

বড় হয়ে ওঠে পিতৃ পরিচয়,

শীতের চলে যাওয়া

রোদের মতো

আঁচড় কাটতে কাটতে

পেরিয়ে যায়

এক যন্ত্রণার বিড়াল।


 

 

 

সমুদ্রপথ

 

মনে হয় এখানেই শেষ অথবা এখানেই শুরু।‌ ভাবনার ডানা ঝাপটে যাচ্ছি শুধু। এক দীর্ঘ কবিতার মতো নেমে আসছে ঘুম। এ এক নির্বিকার যাত্রাপথ।  অতল জলের ডাক তাই একবার কাছে আসে , একবার  দূরে চলে যায়…

 

 

 

 

ফাগুন

 

ফুরিয়ে আসা ব্যথার মতো পড়ে আছে বনের শুকনো পাতা। এ পথেই ফাগুন আসবে। পাতাদের সংসার সবুজ হবে আবার এই পথেই। মানুষের যাতায়াত কমে গেলে নিবিড় হবে প্রকৃতি। শুধু এই সামান্য ক্ষয় আর জন্মের মাঝে আসন পেতে বসবে অন্য কেউ, অন্য কোথাও।

  

 

 


সময়

 

অঝোর ধারা বেয়ে নেমে আসুক আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি। পথ হারিয়ে ফেলেছে যে সময় তাকে কাছে ডাকব আজ। মুখোমুখি বসে হালকা হওয়া যায় এমন এক রাস্তায় আজ মুখর হবে দুপুর, প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির সব ভাঁড়ার উপুড় করে।

 

 

 


ঢেউ

 

ভাঙা-গড়া ,গড়া-ভাঙার মাঝে চেয়ার পেতে বসে আছি। বাইরের হাওয়ায় দুলে চলেছে একটা পর্দা, যেভাবে হাওয়ায় দোল খায় আমাদের অস্তিত্ব। শুধু কিছুতেই বুঝতে পারছি না- তুমি কি দূর থেকে ধেয়ে আসা জল নাকি ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা আমার আবছায়া মন।

 

 

 


বছর শেষের লেখা

 

তারপর ঘুম আসে। আমাদের অমীমাংসিত প্রশ্নগুলি হারিয়ে যায় সংসার সীমান্তে এসে। বাইরে তখন রাত বাড়ে। গাছের ডাল থেকে নির্বিঘ্নে খসে পড়ে একটি জীর্ণ, হলুদ, মলিন পাতা। হাওয়া দেয়। কালের গর্ভে ডুব দেয় মুহূর্ত, আর অগ্রজকে বিদায় জানাতে জানাতে শাখায় কেঁপে ওঠে একটি কচি পাতা।

  

 

 


কাক

 

কিছু কাক উড়ে আসছে এই মিছিলে। আহতের স্বর ভেঙে, নিহতের স্মৃতি থেকে উঠে আসা এই মিছিলে উড়ে আসছে কত কাক। মানুষের চিৎকার থেমে গেলে তার জায়গা দখল করতে নেমে আসবে  কাকেদের ঝাঁক। পৃথিবীকে দখলমুক্ত করে কালো ছায়ায় ভরে উঠবে পথ-ঘাট-বাজার। হিংস্রতার গল্প ফুরিয়ে গেলে তারা নেমে আসবে রাজপথে, মানুষ ধীরে ধীরে লুকিয়ে পড়বে তার আস্তানায়।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ