বিপ্লব রায়'এর কবিতা

 

গুচ্ছ কবিতা

বিপ্লব রায়

জন্ম আটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে। কোচবিহার জেলা, মাথাভাঙা’র প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা। প্রচারবিমুখ বিপ্লব ভালোবাসে রবীন্দ্রসংগীত ও ভায়োলিন বাজাতে। ইতিমধ্যে কবির দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘সম্পর্ক বিরতিকালীন’ (অভিযান পাবলিশার্স, জানুয়ারি ২০১৩), ‘কুমির বৃত্তান্ত’ (অভিযান পাবলিশার্স, জানুয়ারি ২০১৪)। কবির প্রকাশিত বই দু’টি থেকে কিছু কবিতা পাঠকের জন্য রইল ।

    







জলে ডুবতে ডুবতেও হাত নাড়ব

 
কিছু গাছ আর রকমারি পাখিদল রেখে যাব-
তোমাকেও শিখিয়ে দেব মুখোমুখি দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র
পিছন ফিরে দেখলে দেখবে ডাগর ধানগাছ, খামারবাড়ি
ভয় পেও না, জলে ডুবতে ডুবতেও হাত নাড়ব -
 
 
 


সুপ্রচুর গোপন ফাঁক

 
সমস্ত জেগে থাকার সঙ্গে রয়েছে এক গভীর ঘুম
যেমন যত্নে সাজানো বাড়িতে সুপ্রচুর গোপন ফাঁক -
সমস্ত একসঙ্গে হাঁটার মধ্যেও রয়েছে এক সুচতুর দূরত্ব
যেমন নিদ্রিত বালিশের পাশে ভূকম্পন বেলাকার রাত!
 
 
 


প্রত্যেকেই এক-একটা কুমির

 
আমার পরিচিতরা প্রায় প্রত্যেকেই এক-একটা কুমির
এমনকি আমিও!
বেরিয়েছি ভিক্ষুকের ভেক নিয়ে – সাপ রেখেছি ঝোলায়
তোমাকেও ভেবেছি বটবৃক্ষ-পাতা উধাও বৃষ্টি-বাদলে, খরায়—
 




সম্পর্ক কথা

 
সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠলেই নীল অস্থিরতা বোধ করি
অথচ আশে-পাশে কেউ কোত্থাও নেই
চারিদিকে চরাচর আর বিষন্ন বাতাস
সরে দাঁড়াই
আরও অনেকটা নীচে-
 
যেখানে পোড়াকাঠ অপেক্ষা করে
শূন্যরেখা বরাবর-
  
 
 
 

স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণ

 
কিন্তু শেষ অবধি রৌদ্র ভিজে গেল
একটি নীলপাখির উড়ে যাওয়াতে-
দুপুর শুরুর আগে নিঃশব্দ আর্তনাদ,
সমস্ত কথাবার্তা নরম ছিল
বৃষ্টি ছুঁতে চেয়েছিল রাতের বৃষ্টিকে
অথচ ডুবে গেল দিন-রাত!
 
কেঁপে-কেঁপে জ্বর আসে
জ্বরের কবিতা
এখন বুঝি সামনে শীত
অনিবার্য শীতলতা!
 
 
 
 
 

গোপন যুদ্ধ

 
কোনো গোপন খবরই আর গোপন থাকবে না
তোমার অথবা এই কচুপাতা দিনের
বিপদগামী পদযাত্রার-
 
কী করে তোমায় ছুঁই বলো?
বেঁচে আছি সে তো বুক অবধি জলে
একদিকে গাছের পাতা অন্যদিকে অভুক্ত গাছ
শাকপাতা, পিঁপড়ের ডিম -
অথচ তুমি বলো ফ্লাইওভার, শপিংমল
পুরনো কাদা, পুরনো লবণ জল
ব্যবহৃত ফ্যাকাসে কথায় নীল বিনােদন
শুকনো রাতের টিভি সিরিয়াল-
 
কী করে তোমায় ছুঁই বলো?
কানে-কানে বলি শোনো
যুদ্ধ নয়, গোপন যুদ্ধের প্রস্তুতি!
 
 
 
 
 

স্লেট ও শূন্যতা

 
ক্রমশ নিঃশব্দে ভিজে যাচ্ছি
ভিজে যাচ্ছে সমস্ত রকমারি জানালা
মেঠোপথ-আকাশ
আর সকালের একান্ত কাছের রঙগুলো
ইতিবাচক শব্দরা!
 
দ্যাখো পৃষ্ঠার ভাঁজে ভাঁজে ঘনবৃষ্টি
মুছে যাচ্ছে পরিচিত আলপনার চিহ্ন
নীলপাড়ওয়ালা শাড়ির ভাসমান ইচ্ছেগুলাে-
 
কোথায় ভাসাব এ নৌকো ?
অশ্বত্থপথে ধূসর শূন্যতা-
 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ