একটি ননসেন্স বস্তুত

 


হিরণবাবুর
খবরএকটি ননসেন্স।বস্তুত।

দীপঙ্কর লাল ঝা

 

প্রলগ : প্রথমেই বলি এটি একটি খবর। নাটকিয় খবর। কোন উদ্দেশ্য নেই বা, বিধেয় নেই। শুধু একটি খবর। আমরা রোজ খবর পড়ি, শুনি ও দেখি। কিন্তু এবার আমরা বানাব। এবং দেখব খবরের আদৌ কোন চরিত্র থাকে, নাকি তার থেকে চরিত্রের খবর সঠিক ও সুসংহত। এখানে বেশ কিছু ভাষার প্রয়গ করা হয়েছে। এবং খিচুরি রুপে। ভাষা খুব একান্ত এক জিনিস। ভাষা সবার নয়। এটা মাথায় রেখে... 

 

হিরণবাবু খুব ভালো খবর করতে পারেন। মানে এই যে পাড়ার মোড়ে খবরের কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে তিনি এত জোরে জোরে ঝাপটা মারেন , আর দাঁত কেলিয়ে গ্রাম হেসে ওঠে , আহা লেজ বাঁকা কুকুর। পাশে আস্তে করে এক রিকশাচালক স্লো মোশনে মাথার মতো ঘুরতে ঘুরতে এসে হিরনবাবুর পায়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন। রিকশার সামনের চাকা হিরণবাবুর পাজামায় এসে ঠেকলো বলে, এই ঠেকলো.... লো লো লো... কি হলো ঠেকলো কি ঠেকলো না, রিকশাওয়ালা বুঝলো না , না হিরণবাবু। হিরণবাবু খবর করতে পারেন , কিন্তু এখানে তিনি কিছুই করে উঠতে পারলেন না। মনের মধ্যে এক চরম আর্তনাদ ছোটবেলায় কলের মুখে চেপে রাখার   মতো তিনি  রাখলেন, গ্রামের পারে কোনো ধানক্ষেতে জলমেশিনে  ইচ্ছে করতে শুরু করলেন। আহ! কি বায়ু! ভাবলেন পৃথিবীর এযাবৎ সব সুড়সুড়ি মিটে গেছে, কিন্তু পাড়ার মোড়ে এভাবে কেউ আর্তনাদ করে নাকি! লোকে তো পাগল বলবে।  সে যাই বলুন দাদা আপনাদের তো দেখছি গুটি লাল আজকাল, যখন ইচ্ছে যেমন ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। তা ব্যথা করেনা?

 

এই যে দাদা একদম মুখ সামলে কথা বলবেন। একদম মুখ সামলে। ছেলেটা রাতে বেলুনের জেদ করে আর ঘুমোয়নি, খিদেতে ছটপট করছিলো তাও ঘুমোয়নি।

 

তা সেটার সাথে আপনার যেখানে সেখানে লাগিয়ে বেড়ানোর সম্পর্কটা কী? এই যে আর একটু হলেই তো চাকাটা গায়ে লাগতো। মানবতা বোঝেন না নাকি?

 

(কেঁদে) দেখুন দাদা অনেক সহ্য করেছি আর করবো না, মুখে কি চালুনি রাখেন নাকি? যে শুধু ধুলো বেরোয়?

 

আরে আপনি কাঁদছেন কেনো? ছি ছি। এভাবে কাঁদলে তো ফুট ফুটে যাবে, তখন কি করবেন? আপনার পাশে রাস্তা, বাচ্চাদের সাইকেলের তলায় পিষে মারা যাবেন। একদম কাঁদবেন না।

 

ঠিক আছে দাদা কাঁদবো না, নিন চুপ করলাম( জল মুছে বললেন)।

 

দেখুন আপনাকে একটা কথা বলি। আমি এই পাড়ায়, এই বকুল ফুল গাছের নিচে রোজ খৈনি চিবিয়ে দাঁড়িয়ে খবর করি। এবং গ্রামের খবর আমাকে বেশি টানে... যেমন ধরুন... রাতের বেলা অফ হয়ে গেলো ধানক্ষেত সুইচ। খড়ের উপরে লালটু দাঁড়িয়ে বলল, আকাশের নাম কালো বাদাম। ছুক ছুক ট্রেন, দেখুন, ট্রেন কিন্তু একটা জৈব জিনিস। বা ধরুন এরকম একটা খবর

 

তোমাদের ভেতরেও একটা ইঞ্জিন আছে

ভোঁ করে কাঁদে, মাথায় ছাদ লাফিয়ে ওঠে , টগ বগ সূর্য, রোদ বিনা মন লাগে কহা

তোমাদের মাঠ নেই, বাঁশবাগান আছে পাশের কাঁচা বাড়ির থেকে রক্তের গন্ধ,

গলায় থুতু নেই, তীক্ষ্ণ, খাবে কি বাপু?

জিভে বৃষ্টি ফেটে আসে, সূর্য আছে, গোল গোল হোমিও দানা।

 

তারপর?

 

শোনো

 

চোখ চিল ঘোরে, অল্প হয়ে আছি মাছি

মাথায় মাংস আছে বাকি? আমি আছি নাকি

                                        আমি আছি?

কেলটে আছে সূর্যের চুল, এতো রমেনের কাঁচি

ঝুটি ধরে দাও দেখি বাবা, তুমি বিকেল হলে-

বুকে দিলে কেন কাকাতুয়া চাপা?

দেখো , গুজরে গেলো গেরাম

আর কত জল-

উড়ে গেলে আমার যতসব বক ছিল

আর চিরুনি- আশ্রয়

নখ ভাঙছ, বারান্দা দুলিয়ে বাগান দেখে নেবে বলে?

 

বেশ , ভালোই তো বললেন। আজকাল খবরের মাত্রাই অন্যরকম হয়ে গেছে। চলুন চা এর দোকানে গিয়ে বসি। ওখানে আকাশবাবু আছেন। গল্প। আরে এই তো আকাশবাবু এসে গেছেন। আকাশবাবু, , আকাশবাবু, চলুন চলুন দোকানে। তো হ্যাঁ খবর করা বাবু, বলছিলাম যে

 

সিঁড়ি থেকে নেমে এসেছে সূর্য

চোখে ধাপ আর অলি-গলিতে ধাপ্পা

আমি রাখালের মার্বেল ভেবেছি

তোমরা কেড়ে নিলে জাদুবন?

 

বেশ তো, তবে আপনি একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন

 

কাকের ছাতিম ঘিরে এলে

বুকের কাছে জ্বলে ওঠে  পিদ্দিম

নাকের কাছে জ্বরে কাঁপে কালো বাগ

জল জল ভাবে  আঁচল টেনে ঢুকে পড়ে মা

ভুল করে গোয়ালঘর

ফুলে উঠছে চাঁদ বিষফোঁড়ার মতো

গাছের আঙুল ভেঙে দিতে হয়না

বড় ব্যথা , বড় ব্যথা

বাসের ক্লান্ত যাত্রী আমরা

যে যেমন খুশি হেলে পড়ি, মহল্লা মহল্লা হয়ে ওঠে মাথা আর

আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা মুখ ভুলে ফেলি, নয়তো হা ভুলে ফেলি অথবা আঙুল।

 

হিরণবাবু - আকাশবাবুর শরীর খারাপ শুনলাম,

 

আকাশবাবুআর বলবেন না দাদা...(এই বলেই আকাশবাবুর মুখ থেকে হাজার মাছি উড়ে গেলো)

 

হিরণবাবু– (তিনি আকাশবাবুর মাছি থেকে এক ফোঁটা রোদ চটকে নিয়ে বললেন) আর বলবো না মানে, আমি কি বলবো , বলবেন তো আপনি । চা খাবেন?

এই বিষ্ণু, তিন কাপ চা দে ফটাফট।

 

আকাশবাবুআজ্ঞে বলছিলাম যে গত দশ রাত ধরে জ্বরে ভুগছি। কিছুতেই সারছে না। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে কদিন ধরে পায়রা, ঘুঘু, কিছুই আসছে না ।

 

হিরণবাবু কোথায়? ( রিকশাওয়ালাকে চা ধরিয়ে আকাশবাবুকে দিতে বললেন, আকাশবাবু নিজের মতো করে পায়রা বোঝাচ্ছেন, গলার দুপাশে হালকা ঘষে নিয়ে চা এর কাপ ধরলেন, অল্প একটু চা নিচে ফেলে দিলেন পিঁপড়েদের জন্য, আগামী বর্ষা, ওদের খুব প্রয়োজন, মাথার পাশে হালকা হালকা একটা বালিশ ভাব দেখিয়ে দাঁড়ালেন, বসলেন, বললেন) কোথায়?

 

আকাশবাবু- আরে ছাদে , আর কোথায়? দেখুন , আপনার মতো বা এই রিকশাবন্ধুর মতো খবর আমি করতে পারিনা, যে আমার ঘুঘুদের আমি পুষে রাখবো এবং সেখানে এক আস্ত গাধা রেখে বলে উঠবো এটা পায়রা, নাহ আমি এসব পারিনা। মানুষ চুপ করে নেই বুঝলেন ? মানুষ বলছে, কিছু একটা বলছে, তবে ঘাড় ব্যাথার কথাও বলতে হয়, মাথাই ঘুরে যাবে একদিন, আর আপনারা নদীর কথা শুনিয়ে চুপ করিয়ে দেবেন? কিন্তু ফসল কোথায়? আমি ওই ক্ষেতের দিকে তাকাই, তাকিয়েই থাকি, ধোঁয়া দেখতে দেখতে হাতের রগ দিয়ে একটা ঠান্ডা বুড়োর লাঠি নেমে পড়ে, চিনচিন করে, কত সভ্যতা তিনি লুকিয়ে রেখেছেন গায়ে, চোখের হাড় পাতলা হয়ে এসেছে, আমি পারি এসব? দেখুন আমারও কিন্তু ফসল হয়, কিন্তু আমি পেলাম কী? ধান পেলাম, কিন্তু সেটা ফসল নয়।

 

হিরণবাবু- চা টা খান। এগুলো রাজনীতি আপনি কথা থেকে শিখলেন? (রিকশাওয়ালা চরম আক্ষেপের সাথে চা এ ফু দিয়ে একদম ঠান্ডা করে দিলেন, তারপর হীরণ বাবুর কাছ থেকে পেপারটি সজোরে টেনে নিয়ে পড়তে লাগলেন)

 

আকাশবাবু- শোনো , রাজনীতি আমি বুঝিনা বাপু, ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা। পারলে একটু মলম লাগাই, এই আর কি!

 

হিরণবাবু- তার মানে আপনি বলছেন রাজনীতি ক্ষত? (আকাশবাবুর দিকে একটা তেলাপোকার মতো গুটি মেরে ঘেসে বসলেন হিরণবাবু, এবং চরম বর্ষার অপেক্ষারত একটা কুমিরের মতো মুখ করে তাকিয়ে থাকলেন)

 

আকাশবাবু- বাহ, আপনার তো ফাঁসি হওয়া উচিৎ বাবু, একদম মোড়ের মাথায়, ক্ষত মানে? সেরে না উঠলে সেটা ক্ষত হয় কীভাবে? (হিরণবাবু প্রায় চুপসে গিয়েই একটু সরে বসলেন)

 

হিরণবাবু- না না আমি সেটা বলছি না,

(হিরণবাবু ঠিক বুঝতে পারলেন না, কি হলো, ঠিক ওই রিকশার চাকটির মতো, যা এখনো তার মাথায় বেলনার মতো রোল করছে, কিছু না পেরে তিনি রিকশাওয়ালাকে একটা চরম ধমক দিয়ে পেপার টেনে বসলেন)

 

(তারপর কিছুক্ষন সবাই চুপ)

 

তারপর হিরণবাবু- এই রিকশা, বৌদির খবর কি?

 

(আকাশবাবু, মনে মনে- মাল আমাকে ছেড়ে রিক্সাওয়ালার বউ এর খবর নিচ্ছে, বউ দেখলেই শালা বৌদি, বেণীবৌদি, টুনি বৌদি। শালা বউ হলেই বৌদি নাকি!)

 

রিকশা- দাদা, আপনার বৌদি মাছের খবর রাখে , আমার না। সকাল হলেই যেনো মনে হয় কাল হাট থেকে ঝাড়ু কিনতে গিয়ে ঝগড়া করেছে, মুখ একেবারে মৌমাছির পোঁদের মতো করে বসে থাকে । আমি যে কি করি, কোনটা তারাই কিছুই বুঝিনা। তার মধ্যে সকালে দেরিতে গিয়ে টাটকা মাছ পাইনি। মাটির ঘরে বটির কাজ কি বলো? বাঁড়া সিঁড়ি নেই। সরকার থেকে রেশন না দিয়ে শালা সিঁড়ি দিতে পারে।

 

(আকাশবাবু, মনে মনে- দিয়েছে ঝাল)

 

আকাশবাবু- কি হিরণবাবু , কিছু বলবেন নাকি!

 

হিরণবাবু-হ্যা! না মানে, বলছিলাম যে রিকশাওয়ালা বন্ধু ঠিক করেছে!

 

(এই কথাটি আকাশবাবুর জিভে গরম খুন্তির মতো লেগেছে, তিনি ঠক করে একটা সিগারেট ধরিয়ে একটা খাম্বার মতো নিজেকে গেড়ে বসলেন...)

 

(একজন অচেনা ব্যক্তি) আরে ও বচন, তোহর লুগাই বুলাবাই ছ, আরে জলদি জো, ঘর মে পইন চহরল ছ। 

 

(রিক্সাওয়ালার আত্মা শুকিয়ে ততক্ষণে রাস্তা হয়ে গেছে যে রাস্তাতেই আকাশবুর মতো মানুষেরা বাড়ি করে থাকেন এবং রোববারের মাংস ও পানের গন্ধ নিয়ে চরম দুপুরে মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে ধিরিম ধারাম শব্দে কান পেতে থাকেন, মানুষের ঝগড়া এদের হজম বস্তু, রাঙামাটি অথবা পুরনো লালমাটি ভাব উনার কপালে, ঝকমক করে পুরুলিয়ার চাঁদ, গলে যাচ্ছেন আকাশবাবু, এত যত্ন করে রেখেছেন, একটু পরেই তিনি ঘেমে জল, আকাশবাবু পারলে পচ করে ঝাউবনে হেগে আসেন, রিক্সাওয়ালা আকাশবাবুকে একটু ভেঙ্গে বললেন, কী করব?)

 

হিরণবাবু - আরে ছার , যা হবে দেখা যাবে 

 

আকাশবাবু - (বিড়ি ধরিয়ে ) কাল রাতে একটা জব্বর কেস হয়েছে বুঝলেন দাদা

 

(হিরণবাবু কাউকে না জানিয়েই আরো এক কাপ চা হাতে নিয়ে মুন্ডু পাতলেন আকাশবাবুর দিকে, আকাশবাবু একটু বিরক্ত হলেন, হিরণবাবু আংটি থেকে ঝকমক আলো বেরুচ্ছে, যাই হোক তিনি নিজের এক দিগন্তে আঙ্গুল ফাটিয়ে একটা হায় তুলে, মাথার এক কোনে একটু কেদে নিয়ে, বলা শুরু করলেন,)

 

(রিকশাওয়ালা ততক্ষণে পুরো চুপ হয়ে গেছেন,  পাশের দোকানের  একটা   আয়নায় তিনি নিজের মেয়ের কথা ভাবলেন, গালের চারদিকে একটা ডিম ফুটিয়ে অথবা ফাটিয়ে তিনি আর একবার পৃথিবীতে আসলেন ঘুরে, আকাশবাবু আর হিরনবাবু ততক্ষণে পালিয়ে গেছেন, রিকশাওয়ালা একটা বাগান খুঁজছিলেন, তার চম্পা ফুল লাগে , তিনি নদীর একধারে দাড়িয়ে চিত্কার করে উঠলেন 'নদীর দুইপার হয় কেন ? একটি পার হলেও তো অসুবিধে হত না, তিনি বাগানের ভেতর ঢুকলেন, গাইলেন -

 

চোরি চোরি রুক যায়ে ইয়ে সফর 

দিল মেরা বেইমান হে....

 

আবার গাইলেন-

 

আখো সে পতঝড় চুভ্তি হো জিসকে 

মুরঝায়া ফুল কি তাড়াহ 

দরদ সমেটা করতে হে....

 

আবার গাইলেন- 

 

হাম্মার বাপু আর হাম্মর মাই, শুন, তোহর বেটা বহত বড়া ভ গেলও, আব এত্ত খেরহী চাটনি নই ভেটই ছ , মাই তোহর পুত্হু বড পিটই ছ হমরা, হম কি করব , কত্ত যেব, সুখল মিরচাই যেন্য়া সুইত রহইছি , কথু গেলো মাই তোহর মুমে বাদাম খিলানা , আঙ্গন ডুবল যাই ছ , হাম্মর পাতওয়ার লগা দে মাই , আঁখ ভ গেল ফুলল অমরুদ , আঁচলমে ভইর ক অনই ছলিয়া ।

 

একটু চুপ করে রইলেন-

 

ওরে মোহোনিয়া , ওরে চন্দ্রমা

নাও টুটল ছল

কাহে কোন ভরোসে ?

..........

হামি  রিকশাওয়ালা     

বাড়ি ফিরে পান্তা মারি

শালী আকাশ তিতা লাগে

নেশা লাগে মাঝে

ই গা ও গা ঘুরে ঘুরে

কুকুর হয়ে গেছি

দাতে চেপে রাকছি গ্রামের মাংশ

সেখানে বাঁড়া চাদু ভাগ বসিয়ে দিলেক

খোচা খোচা দাড়ি , মাথা মারফত

চিবিয়ে নিলে দুক্ষ থাকে না,

মাথা পুষি, মাছ ধুই

মাছের বড় স্বাদ ,

পাখনা মেলে ঘুরে আসি চল

পেস্তা বাদাম দিয়ে রান্না কর্লেক

শালা সকালে বাবুদের  চিত্যল আড্ডাতে

আমাদের কাজ কী রে ?

 

 আকাশবাবু হাফিয়ে উঠে বললেন --( রিক্সাওয়ালা তখনও বকে যাচ্ছেন, হাতে দাড়ি চেপে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে ) 

 

(প্রথমে রিকশাওয়াল্লার দিকে তাকিয়ে - পেটে প্রচুর কিসসা আর মাথার পেছনে উল্কা / কিছু না করার থাকলে শালা দাড়ি চুলকা) 

তারপর হিরণবাবুকে-  কাল একটু বেরিয়েছিলাম নদীতে , চা খেয়েদেয়ে, পাশের বাঁশবাগান পেরোতেই আমার পায়ে একটা শিশু লাগে।

 

হিরণবাবু- শিশু লাগে মানে?

 

আকাশবাবু- সে যাই মনে হোক না কোনো,( আকাশবাবু একটা ছক কষে নিলেন মনে মনে), শিশু লাগলো , তো আমি পা জোড়া একটু হাতিয়ে নিতে গিয়ে হঠাৎ কামর খেলাম। পেছনে ফেলে আসা বাঁশপাতা তখনো মাথার উপর দুলছিলো, হঠাৎ বাঁশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ ছিটকে এলো, তো আমি ভাবলাম হয়তো নক্ষত্র হবে , গরিবদের নক্ষত্র , মনে ওই যে শান্তিপুরের ওই বুড়ির বাড়ি আছে না?  ওই বুড়ি রোজ একটা করে হাড্ডি ভাঙেন ঘরের চালে এবং তাতে ভালো স্বপ্ন হয়, রাতে এক ফরিস্তা আসে এবং সে হাড্ডির বিনিময়ে নক্ষত্র দিয়ে যায়। ( তারপর আকাশবাবু বুকের মধ্যে পুরো সৌরজগৎ রেখে গলায় একটা বমি বমি ভাব নিয়ে রইলেন। তার মেয়েটার কথা ভাবলেন , একটা ছোট্ট জালনা নিয়ে কিভাবে বসে থাকে, তারই বাইরের থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় মুখ চুবিয়ে , ঝেরে , গোল গোল চোখে মেয়ের পুতুলের দিকে তাকালেন, পুতুল ভয় পেয়ে জানালো মেয়েকে! মেয়ে তার বাবাকে নখ দিয়ে কেটেকুটে নিভিয়ে দিলো, তারপর দে মাকে ডাক! আকাশবাবু গাছের মতো পড়লেন দ্রিম! কারন কোকিল এসে গেছে, কিন্তু তিনি গাছের মতো পড়লেন কেন? কোকিল তো ভালো গান গায়! তবে এই গান সে গান নয়, এই গান শুনলে রজনীগন্ধার গন্ধ চলে যায়, আকাশবাবুর বড় গাছের পাশেই রজনীগন্ধা, সুহানি রাতে তিনি গায়ে মেখে, ছোট্ট ছোট্ট নামহীন পাখিদের বুকে আগলে চাঁদ দেখান , নদী একটা অক্ষরমাত্রা , তার কোমরে দোয়েল, ঘুঘুর ঘুঙুর খুঁজে দিন আকাশবাবু! আপনাকে আকাশ দেবো, শেলাই দেবো, মাছ, নদী, সুর, মাত্রা ছাড়িয়ে, নেচে নিলেই তো ভেঙে গেলাম।)

 

তারপর আমি ভাবলাম একটু কুকুরের মতো শুকে নিই শিশু , কিন্তু মাথার চারদিকে বাঁশপাতা এমনভাবে আকড়ে ধরেছে , নিচু করতে পারছি না, উচু করতে পারছি না, ভাবলাম হাত দিয়ে নাকে তুলে আনি, পারলাম, কিন্তু  পারলাম কই , আমি আর বেরিয়ে আসতেও পারছি না, চারদিকে পিদ্দিম হুপিঙ কাশছে, আমি চিৎকার করছি , এ বাড়ি , ও বাড়ি , আমাকে কেউ ছাড়িয়ে নিয়ে যাও।

 

দেখলাম দূর থেকে এক বুড়ো ছুটে আসছে , ঠিক ওই রামলাল টাইপের, মহাভারত জানা মানুষ, দেখেই মনে হয় তারা এ যুগের নয় , বুকের গামছা মুখে মেখে এরা শিক্ষা অর্জন করে । তিনি আমায় ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন , কি বাপু কি করছেন এখানে? আটকে গেছিলাম, ভেবেছিলাম নদীতে যাবো। তা এখানে শিশু পেলেন? আপনি কিভাবে জানলেন?

 

ছাড়ুন ওসব , বসুন ওই পাথরে বসুন ( তারপর দুজনে বসে পড়লাম)

 

তিনি হাঁকলেন---

 

কানহা কানহা করে মনবা

গুজর যায়ে ইয়ে চঞ্চল হবা

আরে মোহনিয়া , কাহানি বিতি যায়ে

বিতি যায়ে বিটিয়া ,

পনছি আঁখিয়ান কাহে নিন্দ বিসর গেল?

ফরেবি হুয়া যায়ে রাত জিনকে বাহো মে

ঘরের চারদিকে কুচি মুচি পাখিদের

ঘড়ির কাটা হতে দেখি,

চুভতা হে...

খিলতা হে,

উংলিও মে ফুল

এক টুটা টুটা নাও জেসা...

 

আকাশবাবু হাঁকলেন...

 

সুপারির বিচি , গোল গোল স্বাদ

জিভ নিয়ে বাদ দিলে দোষ হবে কার?

বৃষ্টি ধরে আকাশের গায়ে, ঢিল মেরে যায়

চাঁদ বলে , থাক , থাক , খুব ভালো থাক

মাছ ভাজো , ঝোল ঝোল করো দাঁত

গলির ভাজে তুমিও হবে মস্তান মস্তান ভাব

যার জল বোঝে

তারা বোঝে খোল

আরে দোর খোল

নইলে ঝুটি খোল

মা বলে , গরিব আমরা, থাকি দুধে ভাতে

আমি ভাবলাম সাঁতার কাটি ,

কত গরিব হলে সাঁতার কাটা যায় বোল?

হবে হবে , মাঠে ময়দানে কত শাক আর আলু--

তাই আমার নাম হলো আজ কপালু...

 

রামলাল- (রামলাল তার গামছার এক কোন থেকে একটা ছোট্ট বাটি বাহির করলেন, কিন্তু বোঝা গেল না, কোথা থেকে তিনি ইহা বাহির করলেন , খাওয়া শান্তি , ঘরের উপরে রুটি সুখা জল, পৃথিবীর জল! আহা! মানুষ বলে কথা, জলে কত ভূত! কি স্বাদ! মোহনিয়া উনুন উনুন স্বভাব নিয়ে সন্ধ্যে বেলা মাটির ঘরের চারদিকে নিজেকে ঘন করে গঙ্গা গঙ্গা বলেছেন, তুলসী মঞ্চ , তারপর রুটি , মানুষের রুটি) 

 

এই নিন খেসারির চাটনি, লঙ্কা, পেঁয়াজ, সাথে ছোট মাছ ভাজা, গলা নরম হলে চাঁদও নরম, জঙ্গল নরম, ক্লান্ত বাবাদের মতো কেশে নেয়, নরম নরম , গোল গোল। এরপর পাবেন ঠান্ডা জল , শীতল জল, একবারে জ্বরের মতো! খেয়ে নিন, তারপর গল্প হবে ।

 

(হিরনবাবু ততক্ষনে কানের পাশ থেকে একটা কাঠি

বাহির করে সেটার মাথাটাকে হালকা করে ঘষে , মেপে, ফুকে কানের ভেতর প্রবেশ করালেন, আস্তে আস্তে...তিনি এমন ভাবে ঢুকোলেন , আমরা যারা একটু আধটু বাল্ব টাব দেখেছি ছোট্ট গ্যারাজে, তাদের মনে হতে পারে হিরণবাবুর আর কিছু করার নেই, এটাই তার শেষ কাজ , অথবা সেরা কাজ, তিনি এরপর এক বিরাট নাম লুফে নেবেন , ছাদ লুফে নেবেন, গিলে ফেলবেন লাখে লাখে হাততালি, তারপর পড়ে যাবেন মাটিতে , একটা ফোকলা হাসি দিয়ে তিনি নিজেকে মাটিতে  পড়ে যাওয়ার যে অপমান বোধতিনি একটু হেসেই নিজেকে বাঁচাতে পারেন।)

 

আকাশবাবু - রামলাল তোমার নাম কি?

 

আরে আপনি খান তো ভায়া, খেয়ে ফেলুন গপাগপ, নইলে আমাকে খাবেন? (রামলাল চোখ মেলে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে একটা চরম খাদ্যবস্তুর মতো নিজেকে ছিটিয়ে দিলো, চাঁদের কসম খেয়ে (খাদ্যের "খেয়ে"), এই ভুলভুল আলোতে একটা ঝুটি থাকলে চাঁদের নিচে সবাই মোরগ হয়ে যায়, প্রাচীন ইতিহাসে কেউ একজন এভাবে মোরগ লড়াই আবিষ্কার করেছিল, আমি বুঝতে পারছি। আকাশবাবু কিছুই বোঝেন না, তিনি বুঝতে চাইছেন না, বুঝে হবেই বা কি, তিনি রুপোলি মোরগ ভাবলেন, অসাধারণ নাচ, কোমরে যার ঝর্ণা, গলায় চিঠি! আকাশবাবু  রামলালকে  ধমনা কুকুরের মতো নিজেকে খেতে বলতে দেখছেন! সেটা ঠিক স্পষ্ট হলো না , কে কাকে খেতে বলছে?

 

আকাশবাবু দেড়ি না করে খেয়ে ফেললেন খাবার। মানুষের খাবার ও জল। 

 

আকাশবাবু- এবার বলুন! রামলাল, আপনার নাম কি? কোথা থেকে এলেন? 

 

আজ্ঞে আমাকে লোকে রামবচন বলে ডাকে। হাম বিহারী আদমি ছু! কোই শরম নাহি ইস মে , হাঁ বতা রহে হম! ম্যাট্রিক ফইলবা ,( মোচে একটা দিব্য মোচড় দিয়ে), পহিলে ই ডাকিয়া কা কাম করি রহিল, আব বুরহাপা মে দারোগা বনিলে , কা করব বিটুয়া, তু বতা তনিক!

 

আকাশবাবু- রামবচন! খুব ধন্যবাদ খাবার দেওয়ার জন্য । তোমার মোহনিয়া বহুত ভালো রান্না করে, খুব ভালো, আর তুমি জল আনলে কোথা থেকে?

 

রামবচন - সব গ্রামের একটা রহস্য থাকে আর সব গ্রামের ভূত থাকে, এই জল সেখান থেকে আনা 

 

আকাশবাবু- এই জল খেলে মরে যাব তো 

 

রামবচন - এই জল খেলে বেছে যাবেন না, ইটা মানুষের জল 

 

আকাশবাবু- এটা কিসের গন্ধ? চারপাশে ?

 

রামবচন- এটা ঝড়ের  গন্ধ !

 

আকাশবাবু চমকে গেলেন , রামবচন ধীরে ধীরে নিজেকে তুলে সেই আগের মতো গান গাইতে গাইতে চলে গেলেন , উনাকে দেখে মনে হলো আকাশবাবুর সাথে তার কোনদিন দেখাই হয়নি, চেনেন না দুজন দুজনকে , গামছা দিয়ে নিজেকে হলকে হলকে হাওয়া করতে করতে তিনি চলে গেলেন , ওরে ও মোহনিয়া .... কাহা গেলি রে.. রামবচনের মতো মানুষেরা পৃথিবীর অজস্র ভার বইতে পারেন, জন্য পৃথিবী হালকা হয় , আকাশবাবু রেললাইনের দিকে তাকালেন, এবং ভাবতে লাগলেন , রামবচন তাকে কোথাও ঠকালো নাকি, অতশত না ভেবে আকাশবাবু রেললাইন এর পাশে এসে বসলেন , ট্রেন আসছে, একটু শীত শীত করলে তিনি ট্রেনের লাইট থেকে আলো সেকে নেবেন ভাবলেন, আলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে , আলো যত বড় হয়  আকাশবাবুর মাথায় আরো বেশি ঘটনা ঘটতে থাকে, ছুটতে থাকেন আকাশবাবু,  চিলের মতো কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা ধরতে থাকেন , গভীর জলের মাছটাই একদিন বাঁচিয়ে তুলবে আকাশবাবুকে, ত্রান আরো কাছে আসছে , একটা শুয়োপোকা যে  রোদ নেওয়ার জন্য কচি গাছের শেষ প্রান্তে  গিয়ে ঝুলে থাকে ঠিক তেমনি  আকাশবাবুর মাথা... লাইটের অলিগলি.. ভুলভুলইয়া ...ওপারে নদী.. ট্রেন একটা দীর্ঘ আওয়াজ করলো...ধ্নাআআআআআআআআআআ...ঠনঠন লন্ঠন 

 

(আকাশবাবু , ও আকাশবাবু , হিরনবাবু ডাকলেন , বাইরে ঝপ করে বৃষ্টি এলো )

 

হিরনবাবু- বুঝলেন দাদা , আজকাল ঝপ করে বৃষ্টি এলেই পায়ের খোকা গুটিয়ে ছিটকে যেতে ইচ্ছে করে , বিদ্যুতের মতো। 

 

আকাশবাবু খুব মন খারাপ করলেন। মেয়ে গত কদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। বেচারি এরকম একটা বৃষ্টি দেখতে পেলো না। স্কুল ছুটি হলে সব বাচ্চারা নিজেদের নিরীহ করে। ওর মেয়েটাও কমপক্ষে নরম হতে পারতো। জলের মতো। আকাশবাবু একটা লাল দুনিয়ায় চলে যাবেন মেয়ের সঙ্গে , চারিদিকে বিভিন্ন রকম ফুল। একটা নৌকা নিয়ে তারা বেরিয়ে যাবে। সারাদিন ঘুরে বেরোবেন মেয়ের সাথে। 

 

আকাশবাবুর হাত সঙ্গে সঙ্গে পকেটে চলে গেলো। পকেট থেকে একটি প্রেসক্রিপশন বাহির করলেন, কিন্তু তিনি কিছুতেই সেটাকে চিনতে পারছেন না, তিনি আরো চোখ টিপে টিপে দেখলেন, চা এর দোকান ঘেসে প্রায় একটা ছোট খাটো বন্যা হয়ে এলো। 

 

আকাশবাবু একটা দীর্ঘ হাঁফ তুলে উঠলেন মেয়ের অংক বই এর মতো, মুখের সামনে একটা জানলা অভ্যেস করার মতো করলেন, তিনি ঝাটা দেখে বেশ ভয় পান, দরজা খুললেও তিনি ভয় পান, মাথার ভেতর তিনি অনেক ঢপ ফোটাচ্ছেন , সুবাস আসছে, তিনি আরো ভয় পেয়ে এবার ছুটছেন, তার জানলায় মশলার ঝাঁঝ উঠছে। 



হিরণবাবুর খবর - এপিলগ 

 

এখানে কেউ বসছে না । এখানে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। একটা শিশু যার মা বাবা তাকে ছেড়ে বিয়ে বাড়ি গেছে। একটা রক্ত স্নাতক দিদা রেখে , দিদা কিছুই বুঝতে পারেন না ঘরে কি হয়। তার আশ্রয় ঠিক কোন জায়গায়। তিনি রোজ নিজেকে প্রশ্ন করেন চোখ দুটোকে এক জায়গায় এনে। আর পুরো ঘরে একটা ভীষণ লড়াই জেগে ওঠে। বুকে দশটা পাখি এসে বসলে আর সারা ঘরের টিকটিকিরা বিম্বিসার করে আপনার দিকে তাকালে , কৃপণ হতে বাধ্য দিদার বার্ধক্য। কারণ তিনি এখনো বুঝতে পারলেন না , এই যে জীর্ণতা , দু একটা শব্দ উপহারের মতো মুখের কাছে এলে তিনি কোন দিগন্তে পাগলের মত নিজের সাথে কথা বলবেন! আপনি দেখবেন! ঘরে এরকম এক বৃদ্ধা থাকলে, এই ঘর এক ইতিহাসের কথা বলছে, যার নাম দেওয়া হবে হোঁচটনামা , মানুষ ঘরের মধ্যে ঢোকার সময় চেয়ারের কাছে হালকা করে কানা হয়ে লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করে। একটা  বাড়ি দীর্ঘ হতে হতে মানুষ ভুলে যায়, একদিন ঠিক কোন রাস্তায় সে ঢুকেছিলো, বাগান পেরিয়ে , ফুলের উপর দিয়ে লাফ দিতে দিতে , বলেছিল হালকা করে ডিঙিয়ে যাবে , কিন্তু তার বাড়িটা শেষ মাথায়। 

 

এটাই আসল কথা, যদি বুড়ি শব্দ করতে পছন্দ করে তাহলে তার জানা উচিৎ, মানুষ চার পাশে এত আঠা করে নিয়েছে যে ঘরের উপরে সেগুলো আটকে থাকে , আর কিছুদিন পর নিজেই এত ভারী হয়ে আসে , তখন পিঠের উপর গাড়ি চড়াতে অসুবিধে নেই। একদম শেষে তোমার বাড়ি, একদম দেশের শেষে। এবং দেশের শেষে , এরকম এক রাত, যার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একটা মানুষ যখন এ পাড়ায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল ,আমরা  যাঁরা বলেছিলাম " নৌকা নিয়ে যাও"কিন্তু তিনি জল নেই ভেবে কথা শুনলেন না। তাই তিনি বললেন।  বৃষ্টি এলো ঝমঝমিয়ে। কিছু মানুষের ক্লান্তি । যেমন ঠিক এই মানুষটার। একা। প্রকৃতির কাছে সকাল হয়ে দাঁড়ায়। আর শিশুটা জল দেখে ভাবছে তার ঘরেও একটা পায়রা ঢুকেছে। তার ডানা ঝাপটে নিলে শিশু পক করে জলে পড়ে। আমরা এভাবেই পায়ের নিচে জল ঢেলে দিয়েছি শিশুর অথচ জুতো সঙ্গেই রেখেছি। বুকের কাছে। এবং জেলে  উপহার দিয়ে বলেছি, দেখো তোমার জন্য সব পথ খোলা। শিশু ধরতে চাইছে। জানালার পর্দা ভিজে আসলো, কঠিন একটা বোকামি করতে গেলেই আমি চাঁদের তাপে শুকোতে যাবো কাপড়। আর তা করলে চাঁদের কিছু পোকা , ঠিক যেমন একটা বিছার মতো রং , সবুজ, কিন্তু এখানে সাদা। শিশুর প্রচন্ড হওয়ায় চোখ বুজে এলে সে পর্দা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে যায়। আর তা করতে করতেই তার মনে পড়ে কি ভীষণ গাল ফুলিয়ে রেখেছিল সে মাস্টারমশাই এর উপর। মাস্টার মশাই কিছুই করেন নি । শুধু দু আঙ্গুল দিয়ে গাল টিপে দিলেন, আর শিশুর মুখ থেকে টব করে হাওয়া বেরিয়ে আসলো। আকাশবাবু ইতিমধ্যেই এক হতে শুরু করলেন। বিশাল এক হাফ তুলে ভাবলেন ওই একটা গলির ভেতর গিয়ে আতা গাছে তোতা পাখি করে আসি। তিনি গেলেন , প্রথমে প্রচন্ড ভয় পেয়ে বসলেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি হার মানবেন না। প্রত্যেকটি দেয়ালে একটু একটু আশ্রয় ভেবে, এবং তার বাইরে কিছু খুটে খুটে খুটে খাওয়া বৃদ্ধ ঘুঘু, যার অসময়ে পাশের বাড়ির মুরগিদের সাথে ঝগড়া করা হাবিট বানিয়ে ফেলেছে, তাদের গলার কাছে যেভাবে ধীরে ধীরে হাত বোলাতে হয়, এমন ভাবেই, কিছুই না, পায়ের কাছে একটা দৃঢ় চুলকনি রেখে ফিরে আসলেন। এবং আমরা এই হতভাগা শুধু ভিড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেমন আন্দাজ করি , ওই মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নেই , এটির আছে, মাসি আজ দুধ পেলেন না, চা করবেন কি! এরকম ভাবে হাতের গোড়ায় পান তুলে নিয়ে , শুধু মাঝখান দিয়ে কখন যে কোন শিশু কানে ফু দিয়ে শীষ মেরে গেলো বুঝিনি। তার  মানে  আকাশ বাবু শীষ দিলেন। কোনো এক ফেলুদার গল্পের মতো , যেখানে আমরা শুনতে পাই চার পাঁচটি ক্রিমিনাল এক মানুষকে মেরে ঘষ্টাতে ঘষ্টাতে নিয়ে যায়, ঠিক তেমন ভাবে কিন্তু আকাশ  বাবু ব্যাপারটা দেখছেন না। কেননা তিনি বসে আছেন। তিনি শিশু দেখতে পাচ্ছেন না। যেভাবে শিশু চোখ ফুলিয়ে দেখে যাচ্ছে বাইরের দৃশ্য আর নিজের মইধ্যে এক চরম নম্রতা উল্লেখ করছে। যেমন ধরুন রোজ ভাত হয় রান্নাঘরে।ওটা কিন্তু হাঁড়ির উল্লেখ। মানুষ সেখানে শুদ্ধু একটা একটা ঢাকনা। যার মাথা মোটা। আকাশবাবুও ঠিক তাই। আকাশে যেমন বায়ুর কলম আর সামনে আমের কলম , তা এখানে যদি মুখের উল্লেখ থাকে তাহলে কিন্তু তার প্রচন্ড ঠান্ডা লাগতে পারে। সে হিসেবে দেখতে গেলে তো তিনিও ঠিক খুন হলেন কোনো এক জায়গায়। তাকেও তো টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা হলো এখানে, কিন্তু তিনি কিছুই বুঝলেন না। দিদাও বুঝলেন না শিশুর। এই বাড়ির পেছনেও এক বাগান আছে। আর সেখানে একটাই মাত্র ধানের চারা। শিশু পুতেছিলো। আর মাঝে মাঝে জ্বর এলে সে গিয়ে সেটা দেখে। খুব ভালো লাগে তার। কিন্তু এই মুহূর্তে সে যেতে পারছে না। আমি পারছি না আর। কেন জানি মনে হয়। আমাদের এই ভারতের আকাশেও অনেক বরফ আছে। বহুদিন ধরে যেন থমকে আছে কিসের আশায়। কিছু একটা হলেই যেন ঢেলে দেবে সে। আকাশ বাবু কাশলেন। পাশের বাড়ির বেড়ালের ঘুম ভাঙল না তাতে। আর তার মালিক কাশলেন। এখানে কোথাও লেখা নেই যে প্রাচীন ঋষিমুনিরা কুভাবে কাশতেন। হা করে কাশতেন না দাঁত ভরে! সে লম্বা লম্বা দাড়ি! নাকি মোচ ভরে কাশতেন। কিন্তু শুনেছি তারা নাকি পৃথিবীর নয় ,আকাশের। ঠিক কি কি বেরিয়ে আসতো কাশের সাথে? আমরা কেউ জানিনা। এসব একদিন গল্প হিসেবে শুনেছিল শিশু! দিদার কাছে! কিন্তু এসব নয়! আরো অনেক কিছু। একটা পিচ্ছিল কলে দাঁড়িয়ে শিশু ভাবে, চাঁদেও যদি ঋষি মুনিরা থাকতেন , তিনারা কি গ্রন্থ লিখতেন! মাঠের মাঝখানে আলপথে থাকা যে তাল গাছ বিস্ময় সূচকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে; তার কথা লিখতেন কি? তার জবানিতে কত মানুষ ঢিল মেরে তাল পাড়ার যে বিফল চেস্টা করেছেন! তা কতটা যুক্তিযুক্ত? এসো , এসবে সাবধান হই আমরা। নিজেদের দাগ নিজেরাই পরিষ্কার করি আমরা। নইলে দাগ একদিন ক্রমশ যন্ত্রনা হয়। আকাশবাবুর মাথার কাছে একটা ল্যাম্প পোস্ট। তার মাথার উপর একটা শক্ত আলো পড়ছে। এমন সময় তিনি ভাবলেন যে সকালের আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে। কাল মানুষ আসবে এই পথ দিয়ে, মর্নিং ওয়াক করতে করতে আসবে। হাতে কুকুর নিয়ে। তিনি সন্দেহের মাঝে আস্তে চান না কোনদিন। এই হাওয়ার কাছে তিনি একমাত্র একটা খেজুর গাছ পার্সেপশন এ আনতে পারেন এই মুহূর্তে । তার বেশি কিছু নয়। হাত দুটিকে এক জায়গায় এনে। একটা দীর্ঘ নমস্কার করলেন আকাশের দিলে চেয়ে। তিনি বুঝতে পারলেন যদি কোনোদিন খেজুর গাছে কাক এসে বসে। যে কাক এই মাত্র এক ঈগল থেকে বেঁচে এসেছে। তাহলেই তিনি বিশ্বাস করবেন। যে শিশু তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটু নড়ে চড়ে বসতেই শিশু পালিয়ে গেল। মানে এক চরম যুদ্ধের পর, বাড়ির তিন দেয়াল উড়িয়ে দেওয়ার পর যদি কোনো শিশু বেঁচে যায়, সে ঠিক যেভাবে নেমে পড়বে জানাল থেকে ঠিক সেভাবেই নেমে পড়লো। যেমন একটুকুও বোঝা গেল না। তার মানে এই নয় যে সে ভয় পেয়েছে। নাহ। তাকে নামতে হলো। কারণ শেকলের আয়ু বেশিদিন হতে পারেনা। বোঝাতে পারছি না? দাঁড়ান

 

দেখুন আপনি প্রেম করছেন এবং হট করে আপনার প্রেমিকা মাথা থেকে ঝুল ঝেড়ে দিলো, আপনি ভাবলেন আপনার মাথায় অনেক ভূত আছে, এবার অনেকক্ষন ধরে আপনাকে খেয়াল করছে এক শিশু। ঠিক কিভাবে আপনার নজরে আসার পড় সে চলে যেতে পারে! মা এর কাছে চলে যেতে পারে। অথবা দিদার কাছে। আকাশবাবুর ক্লান্তিকে অনেকে সকালের মতো ব্যবহার করলেন। পারলেন না তিনি... 

 

 না, এমনকি পারলেন না হিরনবাবুও। খবর করতে পারলেন না। কেউ ছিল , কিন্তু এখন আর নেই, খেয়ালে চলে গেছে। কেউ চলে গেছে দু পা নিয়ে । কেউ আর ফেরেনি। কারো আসার কথা ছিল, কিন্তু তিনি হিরনবাবুকে জানানো প্রয়োজন মনে করেন নি। তিনি আর হিসেব করবেন না। তিনি আবার বকুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ালেন। অন্ধকার। ঝিঝির শব্দ , ঘুঘুর গন্ধ। হাতে তাও তিনি খবর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন । এক চরিত্র। মানুষেরা দূর থেকে হাট করে ফিরছে। তারা যেন খুনি। খবরের খুনি... ভীষণ ভয় হিরনবাবুর বুকে। তিনি তাও খবর করবেন, ছারবেন না...এরপরের খবর একদম সঠিক হবে ...কোন ভুল নয়। 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Lekhati dirgho tobe amake shesh obdhi porte badhyo korechhe. Enar aro Lekha chy