ওয়াহিদা খন্দকার'এর কবিতা



গুচ্ছ কবিতা

ওয়াহিদা খন্দকার-

                শুন্য দশকের কবি ওয়াহিদা খন্দকার কবিতার অভিক্ষেপে যে যন্ত্রণা ও বিষ তুলে আনেন তা বাংলা কবিতা-পাঠকের কাছে নতুন দিগন্ত।  আত্মচেতনার নির্বেদ ক্রমগুলি বিদ্রোহের মর্ম সঞ্চারে উন্নত হয় বারুদের মতো। চেতন থেকে অতিচেতনায় চলাচলের ভেতর একটা স্পেস তৈরী করেন তিনি যা স্বয়ংক্রিয় অভিব্যক্তি রূপে প্রতিভাত হয়। প্রক্ষিপ্ত বিশেষণগুলিও ব্যক্তিক সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক অবক্ষয়েরই পরিভাষা। পুনরাধুনিক পথে না গিয়েও বোধের ব্যপ্তিতে পুনরাধুনিককে স্পর্শ করেন। বাংলা কবিতার স্বরিক বিবর্তনে ওয়াহিদা খন্দকার কে আলাদা করে চিহ্নিত করবেন পাঠক। কৃত্তিবাস, কবিতা আশ্রম, কবি সম্মেলন, ভাষানগর, দিবারাত্রির কাব্য’র মতো পত্রিকায় কবি তাঁর লেখালিখি সহো অগাধ বিচরণ করেন। ইতিমধ্যে ওয়াহিদা’র দুটি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ  – ‘বিবর্ণ শ্লেটের সমীকরণ’ ও  ‘নীরব দশমিকের ভিড়’-থেকে পাঠকের জন্য কিছু কবিতা রাখা হলো।  




ইনবক্স থেকে বলছি


বলেছিলাম কুকুরের বিস্কুটে নক্সাপাড় হবে।
ও খুব অন্যমনস্ক, মন ফেরে যদি।
ছায়াদি চারদিন ছুটি চেয়েছে,
ছেলের ডেঙ্গু
এঁটো রুমাল লন্ড্রী তে দিও।
 
মনে আছে তো শীতে এখন অলিভ বাতাস
সি বিচ অপেক্ষায় বেশ কদিন
গতবারে পশমিনা কেনা হয়নি কিন্তু!
ওরা নায়াগ্রা দেখে ফিরল।
দূষণে নাকি শ্যাওলার কানাকানি।
 
কর্পোরেট রাতগুলো শুয়োপোকার উৎপাত
রাত শুরুর আগেই ছাইদানি ভর্তি
নাগরিক রাজপথে মাংসাশী বিড়াল ছেড়া অন্তর্বাস মুখে নিয়ে
ইস ছেলেটা সাঁতারে ফাস্ট হলো না!
মনটা গুড়ো হয়ে যায়!
 
ফুটপাতের সেই অন্ধমেয়েটির এবারেও মেয়ে,
তাও আবার অন্ধই...
কর্তা লোকটা তাকে ফুটপাত থেকে বের করে দিল!!
হা হা হা...
মেয়েরা তো জন্মান্ধ এমনিতেই,
চোখ না থাকলে কি এসে গেল!!
 
 
 

 

এসো না

 
আপাতত এসো না,
হেমন্তের অসুখে সেরে ওঠো আগে।
দাঁড়িয়ে থাকব, যে বাঁকে গিয়ে জল আর গড়ায় না।
না লেখা দিনগুলি থাকবে তেমনি মীরার বেশে
 
জানি পার হয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য নিটোল দৃশ্যরা
আরও মিলিয়ে যাচ্ছে যুবতি জোছনা।
মেঘনা কূলে আর্ত সেবা করছি শুধু,
হয়তো আড়ালে দীর্ঘ হচ্ছে স্বাভাবিক অঞ্চল।
 
এসো না।
বরং অবশ হও
ততক্ষণ কুলো থেকে কাঁকরগুলি বেছে রাখি।
ঘুমের পর স্নায়ুহীন তোমাকে শেখাবো, নিথর হতে কতটা ক্লোরোফর্ম জরুরি!
 
 
 
 
  

প্রশস্ত

 
ভালোবাসাও এক তরঙ্গবাহী রোগ।
ভাসি দূর, আর দিঘি আঁকি, বাঁধুনি
যা তোমাদের কাছে বহিরাগত পাপ।
 
স্বাদ ও পাপ এক সহজ রসায়ন
নুনও তো হয়নি এমন সুমিষ্ট।
পাপমোচী হতেই অসাড় দূরত্বে
ডানা হই; যা দেখো এ ধ্বনিহীন মেলা।
 
খিড়কি খোলা আছে, অবারিত। তাকাও।
সিংহদ্বার শুধুই তো নীরব সৌধ।
 
 
 
 

আরেকবার জন্মালে ভালো হত

 
বাইপাসের কিছু তো নাম রেখেছো,
সবাই রাখে নিজের মতো।
কতবার বলেছি জন্মাও আরেকবার
শিকড়ে জলের গন্ধ
জলে মেঘের। কিছু কি নেই মেঘ ছাড়া, মুক্ত !
 
বইয়ে ধুলোর সর জমেছে
বিরল, গীতিগুঞ্জ হয়নি পড়া কোনোদিন।
কিছু অন্ধকার এড়িয়ে গেছে, মেধা পেল না।
তাদের কাছে পৌছানো প্রয়োজন ছিল খুব।
তাই আরেকবার জন্ম নিলে খুব ভালো হত।
 
 
 
 

মুখ

 
তোমার কাছে রোজ যাকে দিয়ে আসি সে আমার পোশাক মাত্র।
গভীরে হাত ডোবাও,
বের করে আনো নির্দিষ্ট মৃন্ময়।
পছন্দসই আয়না রোজ ব্যতিক্রম।
টেলিছবির ছদ্মবেশী নায়িকার মতো
সযতনে মাসকারা, দৃষ্টিবদল...
 
বৃষ্টিবদলের অভিসার...।
তারপর জ্বেলে দিই কুশপুতুল।
সম্মোহনে ভুলিয়ে দাও
 
মুখগুলির আণবিক মান।
একটা দিনের কাছে যাব বলে।
পৌঁছে দিই এমনতর গ্রহগুলিকে সূর্যের কাছাকাছি।
 
 
 
 
 

মাথুর

 
রাত্রিকালীন দুপুরে রূপচর্চা করে মা,
চাঁদের ঘরে ভাস্কর্য আছে জেনে নতুন করে দেখে চাঁদের আলো।
তীক্ষ্ণ হতে হতে সরু হয়ে যাচ্ছে ব্যয়িত আলপথ।
রান্নাঘরে নিপুণ ডিগবাজিতে আরশোলা।
 
চিঠি হাতে মা খুঁজতে থাকে বিনম্র বিকেল আর বৈঠাসহ মাঝি।
চুলে কলপ, খোঁপা, খোঁপায় চন্দ্রমল্লিকা...
নিকানো দৃষ্টিপথে কাজলের ক্ষয়িত টান
পুকুর ভরতি জল থইথই।
মায়ের ব্রজবিলাস এমনি চলে গোপন অভিসারে।
 
বাঁধন ধরে রাখা যায় না বুঝি
রাখা যায় না স্মৃতিগত অসুখ
বাবার অসুখও এমনি...
মুখোমুখি... যাতায়াত চোখে চোখে।
দূর থেকে দেখতে পায়,
আমার সাথে বেড়ে উঠছে মায়ের নিঃসঙ্গ ব্রজবিলাস।
 
 
 
 
 

অন্তর্ধান

 
বেশি হারিয়ে যাই বলেই
কেউ মনে রাখে না, সরিয়ে রাখে।
মনে রাখা খুব জরুরীও নয়।
তবু পথ পেলে হয়ত কোথাও
নুন মত না একটুও।
 
এখন যা রোদ আর দুর্গন্ধ শহরে
সুসকাল লাট খায় মরা ইদুরে... ও
মানুষ মানুষ হাঁ চিৎকারে...
দূষণে ফুরিয়ে যেতে পারে সব কর্জ
ভেবে ডুবে যাই প্রতিবিম্বে, নিয়মিত সূত্রে।
হারিয়ে যাওয়া তো বেঁচে থাকারই স্বচ্ছন্দ প্রতিলিপি
 
 
 
 

বিবর্ণ মুখ

 
দুবাহু দু সন্তানের। আমি আসলে সমদ্বিবাহু
ত্রিভুজ। যোনি মুক্তির পথ আর স্তন যে খিদে তা
অনুভবের আগেই আমি ভ্রূণের দখলে। পূর্বে
এ মফস্বলে বর্গা করত অন্য কেউ। অতএব
কারোর দখলে ছিলামই
 
যাঁরা পদবী চেনেন, তারা তো পদান্তর বিলাসী,
সন্তুষ্ট। এ পদ তাদের না।
 
আমার দুর্বল ঘেরাটোপে যারা, আমি তাদেরই
স্বর্ণলতা। গবেষণাপত্র তৈরি করতে টোপর
সরাতে হবে; এগোতে হবে অনন্তপুর। ধূসর
ঘুঘুর গলায় বেজে চলে আমার বিবর্ণ মুখ।
সে সুখে, অনন্ত... ডুবে আছি।
 
 
 
 
 

সরব রবিশস্য

 
কাছে পেলেই মৃত্যুর কথা আর নয় !
সব মৃত্যুই অমন নিঃসঙ্গ, নীরব ।
শুধু বিবর্ণ ফেনার ফাঁপা শহরতলী...
ওদিকে নিষ্কাম শান্তি খুঁজে পাও বুঝি !!?
 
এদিকে তাকাও, হেঁটে গেছে আস্তাবল
অস্থির হ্রেষায়। চাষ হচ্ছে রবিশস্য
নতুন পলিতে।
ফিরে এসো চিৎকার করি সরবে।
 
 
 
 
 
 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ