চেনা মুখ অচেনা কথা
সালটা ২০১০/১১ হবে, সেই সময়গুলোতে উত্তরবঙ্গ চষে বেড়িয়েছি কবিতা ও কাগজের টানে। তো এমনই এক আড্ডায় দেখা সাদামাটা চুপচাপ স্বভাবের এই মানুষটির সাথে। সচরাচর সেভাবে খুব বেশি বললেন না। আবার কবিতা নিয়ে কথা শুরু করলে মুখ থেকে কাটা বেরোয়। সেইসব কাটায় বিদ্ধ হয়ে অনেককেই ক্ষত লুকোতে দেখেছি। পেষায় শিক্ষক, কর্মসুত্রে কোচবিহার শহরে থাকলেও জন্ম নিশিগঞ্জ'এর প্রত্যন্ত গ্রামে। কবি অজিত অধিকারী'র লেখায় তাই মাটির আবেগ, পড়লেই বোঝা যায়। এই পর্বে আলাপচারিতায় কবি অজিত অধিকারী।
বলে রাখা উচিৎ যে -এই বিভাগে প্রকাশিত কথোপকথন'এর কোনো পূর্ব পরিকল্পিত প্রস্তুতি নেই।
অজিত অধিকারী : আসলে ভূখন্ড'র ভিত্তিতে সাহিত্য হয় না। তবে সাহিত্য অভিজ্ঞতা বলে গ্রুপ বাজি আছে। কাউকে উঠতে না দেওয়ার ট্রেন্ড আছে। দাদাগিরি আছে। পুরুস্কারের লবি বাজি আছে। তাই অনেক সময় স্বতন্ত্র সাহিত্য গোষ্ঠী বা স্থানীক গোষ্ঠী হয়। ধরো বাংলা আকাদেমিতে কবিতা পড়তে তুফান গঞ্জ থেকে কেউ যাবে। তার চেয়ে শিলিগুড়ি কাছে। এখানে আকাদেমি তে কবিতা পড়ার সুযোগ পেলে এখানেই সে যাবে।
র : ‘লবি বাজি, গ্রুপ’ – তোমার কোনো অভিজ্ঞতা আছে? যদি শেয়ার করো ভালো হয়!
অ : বিষয়টা এভাবে ভাবা যায় গনশত্রু হবো। যোগাযোগ রাখা একটা বিষয় ঘুর ঘুর করা একটা বিষয়। দেখা যায় পরিচিতরাই ডাক পায়
র : ‘আচ্ছা, উত্তরের কবি সাহিত্যিকরা বঞ্চিত’- কথাটা সত্যি, না নিছক রিউমার?
অ : ওভাবে বলা যায় না। আমাদের সিলেবাসে উত্তরবঙ্গে বসবাসকারী কবির কবিতা নেই, কেনো বলো? উত্তরবঙ্গে'র কোনো কবির নামে রাস্তা বা স্টেশন আছে, কোনো মূর্তি আছে, কোনো পুরস্কার আছে?
র : এটাও তো হতে পারে যে উত্তরবঙ্গে তেমন কোনো কবি-প্রতিভা নেই বা আসেনি যাকে নিয়ে এমন কিছু যেমন রাস্তা, স্টেশন এর নাম করা যায়, হতেও তো পারে! কি মনে হয়?
অ : এটি ভাবার। তবে দু-তিন জন আছে। সিলেবাসে আসার মতো কবি আছে। নাম জিজ্ঞেস করো না।
র : বলেই ফেলো নামগুলো
অ : না। অতো সবার পড়িনি। তবে আছে। শুধু প্রমোট করার বিষয় আছে।
র : তুমি বলেছ ‘ঘুর ঘুর করা’। মানে?
অ : Oiling...মুখ চিনে মুগের ডাল। যোগাযোগ। সবক্ষেত্রের কথা বলছি না। তবে আছে। দেখেছি ছড়াকার মিডিয়ায় বড়ো কবি হয়ে উঠেছে।
র : ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর’এর মতো যদি ‘উত্তরবঙ্গ সাহিত্য আকাদেমি’ তৈরি হয়, তুমি কি খুশি হবে?
অ : হলে ভালো। এতে মূল্যায়ন ভালো হবে।
র : কলকাতার লোকেরা কি সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছে না?
অ : অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয় না ওঁরা। কেউ তো পড়েই না।
তাই চর্চা হোক। তাতে ক্ষতি কি। অকবি বড়ো হয় আবার প্রকৃত প্রতিভা চাপা পড়ে যায়।
র : এটা কি হেয়ো করা নাকি পৌঁছনোর খামতি, বা যোগাযোগ মাধ্যম কোনটা?
অ : সব মিলিয়ে বিষয়টা অনেকাংশে তাই। সব আছে এর মধ্যে। ছড়াকার হেড লাইন হয় মিডিয়ায়। সেটা আমাদের উত্তরবঙ্গে আছে। তুমি ভালো লেখো, কয়দিন পেপার ডেকেছে? আকাদেমিতে ডাক পেয়েছো? অকবি বড় হয় আবার প্রকৃত কবি চাপা পড়ে
র : কালের নিরিখে দেখেছি প্রকৃত কবি, সাহিত্যিক তাঁর জীবনকালে আলোকিত হন নি, বা চেষ্টাও করেননি। বেশির ভাগ সময় হেয়ো হয়েছেন, কিন্তু পরে তাঁকে নিয়েই নাচানাচি করেছে সবাই। তাহলে কবি হিসেবে তুমি চাপা পড়ে যাবার কথা বলছ কেন? ওটা তো কবির মাথায় আসার কথা নয়!
অ : ঠিক। তবে এটা চলতে পারে না।
এক সময় পাঠক হিসেবে এসব মনে হয়, প্রকৃত কবি এসব ভাবে না। তবে আমাদের ভাবা দরকার।
র : আজকে সামাজিক মাধ্যম এতটাই উন্নত যে কারোর উপর নির্ভর হতে হচ্ছে না, যে যেভাবে পারছে নিজেকে জাহির করছে। বিষয়টা নিয়ে কি বলবে তুমি?
অ : Time is the best examiner। লিখুক, জাহির করা ঠিক নয়।
সময় ঠিক করবে।
র : ‘উত্তরবঙ্গ’ আলাদা রাজ্য হিসেবে দাবি অনেকের। তুমি কি বলো?
অ : আলাদা রাজ্য নয়। তবে উন্নয়ন চাই। কর্ম সংস্থান চাই।
র : ধরো আলাদা রাজ্য যদি হয়, তাহলে কি সাহিত্য-চর্চার গতিমুখ পরিবর্তন হবে?
অ : এভাবে বলা যায় না।
জেলখানায় বসেও বড় সাহিত্য হয়েছে, আলাদা রাজ্য হলে ভালো সাহিত্য হবে এমন নয়, মূল্যায়ন হোক ভালো ভাবে।
র : ধরো একটা রাজ্য, তাঁর একটা নিজস্ব আকাদেমি, বিভিন্ন চেনা মুখ বিভিন্ন পদে, তাতে সুযোগ বাড়বে, এতে পুরষ্কার, নজরদারি সবকিছুই বাড়বে, এককথায় গুরুত্ব দেবে মাটি ও মাটির ভাষা-শিল্পীদের। কি মনে হয়?
অ : দেখো। সাতশত বছরের রাজ ইতিহাস কোচবিহারের, মাধ্যমিক সিলেবাসে আসার উচিৎ, আসে নি!
বাংলা আকাদেমির ব্রাঞ্চ হওয়া উচিৎ, হয় নি। সেটা শাখা সেন্টার হলেও চলে। কোচবিহার এর রাজ ইতিহাস অতীব গৌরবের। পড়ে দেখো। বিরাট সাহিত্য চর্চা কিন্তু অনালোচিত।
র : এসবের দায়িত্ব আমাদের, মানে উত্তরবঙ্গের কাগজ, কবি লেখকদের। কিন্তু আমরা নিজেরাই কলকাতা মুখি হয়ে থাকি, বলা ভালো ওদের দ্বারা আলোকিত হই। তাই নয় কি?
অ : ঠিক।এটাও ঠিক। আমাদের মিডিয়া নেই, তাই আমাদের আগাতে হবে আমাদের মতো করে, উৎসাহিত করতে হবে তোমাদের মতো কাউকে।
র : আচ্ছা লোকো-ভাষা, লোকো- সাহিত্য, এসব করতে গিয়ে আমরা কোথাও আমাদের বলতে পারাগুলোকে সীমিত করে রাখছি নাতো?
অ : দেখো লোকো-ভাষা আমাদের সবার সম্পদ। খনি আছে এখানে। তাকে অবহেলা নয় আদর দরকার । এটা সর্বত্র প্রযোজ্য। লোকসাহিত্য যে কোনো দেশের সম্পদ, তাকে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার ও উৎসাহিত করা দরকার। আচ্ছা বলতো বাংলায় কটা সিনেমায় ভাওয়াইয়া বা ভাটিয়ালি গান দেখো?
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখানে হলে সমাদৃত হবে বলে আমি মনে করি।
র : নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য, সম্পদ, নিজের নিজের সব কিছুই নিজের – এই ‘নিজের’টা আত্ম-অহংকার তৈরী করে, সেটা একজন কবির লেখার ক্ষতি করতে পারে। কি মনে করো?
অ : না না। ওসব সুকৌশলে প্রয়োগ দরকার।অহং নয়। highlighted হোক ক্ষতি নয় আলোকিত হোক, পীযুষ লেখে এতে আলোকিত হয়। একদম অহং নয়।
র : একজন কবি হিসেবে তোমার কিছু পাওয়ার আছে/ বা কোনো দাবি?
অ : না।
শুভেচ্ছা রেখো যাতে কবিতা লিখতে পারি। ভাই'য়ের মৃত্যুর পর আমি অন্য মানুষ। কোনো প্রত্যাশা নেই। শুধু কাজ করতে চাই। শেষ বয়সে আশ্রমে থাকতে চাই যেখানে তোমরা মাঝে মাঝে আসবে। নৈষ্ঠিক আশ্রম, কোনো প্রত্যাশা নেই আমার। তোমাদের ভালোবাসতে চাই। এটুকুই
র : তোমার লেখাতে একটা মেলানকলি আছে, মানে সে গাছ, নদী এক অদৃশ্য দূঃখ। এটা এই বঙ্গের মাটি প্রভাব, নাকি জাস্ট চলে আসে?
অ : বেদনাবোধ ফিল করি। নিঃসঙ্গ লাগে। একা হয়ে থাকি ঘরে বাইরে। সেই অনুভূতি আসে স্বতঃস্ফূর্ত
র : তুমি যদি কলকাতার মানুষ হতে তাহলে তোমার লেখায় ভাষার পরিবর্তন হতো, কী বলো?
অ : কর্পোরেট চাপে ভেঙে যেতাম কিনা জানিনা। তবে এখানে খুব ভালো আছি। ভাষা বদল এখানে হতে পারে। আরো জীবনের গভীরে যেতে হবে।
র : তোমার লেখাতে একটা মেলানকলি আছে, মানে সে গাছ, নদী এক অদৃশ্য দূঃখ। এটা এই বঙ্গের মাটি প্রভাব, নাকি জাস্ট চলে আসে?
অ : বেদনাবোধ ফিল করি। নিঃসঙ্গ লাগে। একা হয়ে থাকি ঘরে বাইরে। সেই অনুভূতি আসে স্বতঃস্ফূর্ত
র : তুমি যদি কলকাতার মানুষ হতে তাহলে তোমার লেখায় ভাষার পরিবর্তন হতো, কী বলো?
অ : কর্পোরেট চাপে ভেঙে যেতাম কিনা জানিনা। তবে এখানে খুব ভালো আছি। ভাষা বদল এখানে হতে পারে। আরো জীবনের গভীরে যেতে হবে।
পেশাগত কারণে এটুকুই পারি না!
র : প্রিয় কবির তালিকা থেকে কজনের নাম?
অ : ভাস্কর চক্রবর্তী, রনজিৎ দাশ, বিনয়, শক্তি, সুনীল ও আরো দু-চার জন আছে
র : উত্তরের কেউ?
অ : নীরদ রায়, সন্তোষ সিংহ, তৈমুর খান, অনুভব দা এনাদের মাঝে মাঝে বেশ ভালো লাগে। সব কবিতা সব কবির ভালো লাগে না, বুঝতেই পারো। মাঝেমধ্যে অন্যান্য দের কিছু ভালো লাগে
র : উত্তরে লেখা পড়া ও চর্চার বাইরে সাধারণ কবিতার পাঠক কম, এটা সত্যি নাকি ধারণা?
অ : কিছুটা ঠিক। সব ঠিক নয়।
র : প্রিয় কবির তালিকা থেকে কজনের নাম?
অ : ভাস্কর চক্রবর্তী, রনজিৎ দাশ, বিনয়, শক্তি, সুনীল ও আরো দু-চার জন আছে
র : উত্তরের কেউ?
অ : নীরদ রায়, সন্তোষ সিংহ, তৈমুর খান, অনুভব দা এনাদের মাঝে মাঝে বেশ ভালো লাগে। সব কবিতা সব কবির ভালো লাগে না, বুঝতেই পারো। মাঝেমধ্যে অন্যান্য দের কিছু ভালো লাগে
র : উত্তরে লেখা পড়া ও চর্চার বাইরে সাধারণ কবিতার পাঠক কম, এটা সত্যি নাকি ধারণা?
অ : কিছুটা ঠিক। সব ঠিক নয়।
এর জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব আছে কবিতা মুখী করা। কারন কবিতা অন্তরের চোখ খুলে দেয়। জগৎকে দেখার ভঙ্গিমা পাল্টে দেয়। তাই কবিতা পড়া উচিৎ, কবিতা চেতনার মান বৃদ্ধি করে।
র : অনেকের অভিযোগ উত্তরের লেখায় আত্ম-কথন বেশি, দূঃখ, কষ্ট, আবেগ, সমস্ত দিয়ে আচ্ছন্ন। কি বলবে!
অ : এটা কথা নয়। কবিতায় subjectivity থাকে। এটা রোমান্টিকতা ও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। কারণ কবিতার ‘আমি’ আমি নয়। ঐ ‘আমি’ প্রত্যেক মানুষ। তারপর ঐ ‘আমি’ সমাজ তারপর দেশ। ব্যক্তিগত দূঃখগুলো সার্বজনীন, রবীন্দ্রনাথের গানে আমি ও তুমি। তারমানে কি ব্যাক্তিগত?
র : যদি কোনো ‘আমি’ ‘প্রত্যেক’ না হয়ে ওঠে তাহলে কি সেই ‘আমি’র গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যায় না?
অ : যাহা নাই মানুষে তাহা নাই মানুষে। সব আমার আত্মার অংশ। তাই অন্য কবি-যন্ত্রণা আমার যন্ত্রণা’কে স্পর্শ করে। অথবা সেই কবি আমি হয়ে উঠি।
র : তবে অতিরিক্ত ‘আমিত্ব’ কবিকে ও কবিতাকে নষ্ট করে। তাই না?
অ : প্রকৃত কবিতায় ওসব মনে হবে না। জীবনানন্দের কোন কবিতায় আমিত্ব নেই! ‘আবার আসিব ফিরে’ কী মনে হয়?
র : এইসময়ের কবিতা তুমি পড়, কেমন লাগে?
অ : কাব্য ভাষা খুব কম খুঁজে পাই। নাম ঢেকে পড়লে মনে হবে সবই এক। কার কোনটা কবিতা বোঝা যায় না। স্বতন্ত্র কাব্যভাষা চোখে পড়ে না। তারমধ্যে ভালো কবিতা পাওয়া যায় কিন্তু কাব্য-ভাষা বিরল। কবিতা-লেখক আছে কিন্তু কবি কম।
র : সর্বত্র বাংলা কবিতায় এক্সপেরিমেন্টাল লেখার হুজুগ চলছে। তুমি কি বলবে?
অ : দেখো এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে হঠাৎ কেউ কাব্য ভাষা খুঁজে পায়। আর অনেকের ওই করতে জীবন যায়। এটা ভাগ্যের বিষয় কে ঝট করে কাব্যভাষা খুঁজে পাবে
র : এই এক্সপেরিমেন্ট ভালো না খারাপ?
অ : এক্সপেরিমেন্ট করা কিছু সময় ভালো তারপর নিজের মতো লেখা উচিৎ। অনুকরণে কবির মৃত্যু হয় স্বতন্ত্র সাহিত্য ভাইটাল, জীবনানন্দ কে অনুকরণ করে এক দুজন কবি হারিয়ে যাওয়ার মুখে
র : কবি কবিতা লিখে কী পায়?
অ : নিজের কাছে নিজের আত্মরক্ষা। catharsis। একধরনের নির্বান। ভাবমোক্ষন, আত্মার আনন্দ।
র : কবির লেখা কে পড়ল, কে পড়ল না – এই নিয়ে কবির কি ভাবনা থাকা উচিৎ?
অ : একদম নয়। তার লক্ষ্য সাধনা
র : সাধনা?
অ : পূর্ববর্তী'দের কবিতা পড়া। তারপর নিজের প্রস্তুতি। তারপর চোখ কান খুলে লেখা। লিখতে লিখতে লেখক, গাইতে গাইতে গায়ক
র : কোন ধরনের কবিতা তোমার পড়তে ভালো লাগে?
অ : দেখ, সত্যি কথা হলো অনেক কবিতাই পড়ি।
র : অনেকের অভিযোগ উত্তরের লেখায় আত্ম-কথন বেশি, দূঃখ, কষ্ট, আবেগ, সমস্ত দিয়ে আচ্ছন্ন। কি বলবে!
অ : এটা কথা নয়। কবিতায় subjectivity থাকে। এটা রোমান্টিকতা ও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য। কারণ কবিতার ‘আমি’ আমি নয়। ঐ ‘আমি’ প্রত্যেক মানুষ। তারপর ঐ ‘আমি’ সমাজ তারপর দেশ। ব্যক্তিগত দূঃখগুলো সার্বজনীন, রবীন্দ্রনাথের গানে আমি ও তুমি। তারমানে কি ব্যাক্তিগত?
র : যদি কোনো ‘আমি’ ‘প্রত্যেক’ না হয়ে ওঠে তাহলে কি সেই ‘আমি’র গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যায় না?
অ : যাহা নাই মানুষে তাহা নাই মানুষে। সব আমার আত্মার অংশ। তাই অন্য কবি-যন্ত্রণা আমার যন্ত্রণা’কে স্পর্শ করে। অথবা সেই কবি আমি হয়ে উঠি।
র : তবে অতিরিক্ত ‘আমিত্ব’ কবিকে ও কবিতাকে নষ্ট করে। তাই না?
অ : প্রকৃত কবিতায় ওসব মনে হবে না। জীবনানন্দের কোন কবিতায় আমিত্ব নেই! ‘আবার আসিব ফিরে’ কী মনে হয়?
র : এইসময়ের কবিতা তুমি পড়, কেমন লাগে?
অ : কাব্য ভাষা খুব কম খুঁজে পাই। নাম ঢেকে পড়লে মনে হবে সবই এক। কার কোনটা কবিতা বোঝা যায় না। স্বতন্ত্র কাব্যভাষা চোখে পড়ে না। তারমধ্যে ভালো কবিতা পাওয়া যায় কিন্তু কাব্য-ভাষা বিরল। কবিতা-লেখক আছে কিন্তু কবি কম।
র : সর্বত্র বাংলা কবিতায় এক্সপেরিমেন্টাল লেখার হুজুগ চলছে। তুমি কি বলবে?
অ : দেখো এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে হঠাৎ কেউ কাব্য ভাষা খুঁজে পায়। আর অনেকের ওই করতে জীবন যায়। এটা ভাগ্যের বিষয় কে ঝট করে কাব্যভাষা খুঁজে পাবে
র : এই এক্সপেরিমেন্ট ভালো না খারাপ?
অ : এক্সপেরিমেন্ট করা কিছু সময় ভালো তারপর নিজের মতো লেখা উচিৎ। অনুকরণে কবির মৃত্যু হয় স্বতন্ত্র সাহিত্য ভাইটাল, জীবনানন্দ কে অনুকরণ করে এক দুজন কবি হারিয়ে যাওয়ার মুখে
র : কবি কবিতা লিখে কী পায়?
অ : নিজের কাছে নিজের আত্মরক্ষা। catharsis। একধরনের নির্বান। ভাবমোক্ষন, আত্মার আনন্দ।
র : কবির লেখা কে পড়ল, কে পড়ল না – এই নিয়ে কবির কি ভাবনা থাকা উচিৎ?
অ : একদম নয়। তার লক্ষ্য সাধনা
র : সাধনা?
অ : পূর্ববর্তী'দের কবিতা পড়া। তারপর নিজের প্রস্তুতি। তারপর চোখ কান খুলে লেখা। লিখতে লিখতে লেখক, গাইতে গাইতে গায়ক
র : কোন ধরনের কবিতা তোমার পড়তে ভালো লাগে?
অ : দেখ, সত্যি কথা হলো অনেক কবিতাই পড়ি।
তবে কাঠখোট্টা কবিতা ভালো লাগে না। শব্দের ব্যবসা ভালো লাগে না। বুদ্ধির নির্মাণ ভালো লাগে না। হৃদয় ও মেধার যোগ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখা আমার ভালো লাগে। আমি সুজিত অধিকারী’র কবিতাকে বলি realistic romanticism এই জাতীয় কবিতা ভালো। ওর নামটা বললাম কারণ ওঁর কবিতা একবার পড়েই মনে থাকে। ঠিক ওই জাতীয় কবিতা পড়তে ভালো লাগে। সত্যি কথা বললাম। অন্য রকম ভাবলে করার কিছু নেই। যদি। Realistic romanticism কবিতা তোমার জানা থাকলে বলো আমি কিনে পড়ব। হৃদয় ছোঁয়া ও মেধার খেলা এমন কবিতা পড়তে চাই, এটা আমার ব্যক্তিগত।
র : লেখার সময় তোমার মাথায় কি চলে?
অ : কে লেখায় জানিনা। অস্থিরতা। প্রসব যন্ত্রণার মতো হয়তো কিছু আমি সচেতন লিখি, কিছু কেউ যেন লেখায় ভেতর থেকে। উন্মত্ততা আসে। তারপর শান্তি
র : তোমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কতো?
র : এই সময় 'উত্তরের কবিতা চর্চা', কি বলবে?
অ : দারুণ চর্চা হচ্ছে। তোমরা একটা গ্রুপ ভালো লিখছো। মেয়েরাও ভীষণ এগিয়ে এসেছে। হয়তো উত্তর বঙ্গ একদিন কবির দেশ হবে। দেশ মানে ভূখন্ড, কবির আবাস।
র : নতুনদের কী বলবে?
অ : পূর্ববর্তী সব কবির কবিতা পড়া এবং কোন কোন বিষয়ে কাজ হয় নি সে বিষয় গুলো নোট করা। ছন্দ কিছু আয়ত্ত করা। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা। এবং লিখে যাওয়া।
র : আগামীতে তোমার বই পাব!
অ : কবিতা রেডি। করোনা কাল কেটে গেলে ট্রাই নেবো
র : আগাম শুভেচ্ছা রইল!
র : লেখার সময় তোমার মাথায় কি চলে?
অ : কে লেখায় জানিনা। অস্থিরতা। প্রসব যন্ত্রণার মতো হয়তো কিছু আমি সচেতন লিখি, কিছু কেউ যেন লেখায় ভেতর থেকে। উন্মত্ততা আসে। তারপর শান্তি
র : তোমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কতো?
র : এই সময় 'উত্তরের কবিতা চর্চা', কি বলবে?
অ : দারুণ চর্চা হচ্ছে। তোমরা একটা গ্রুপ ভালো লিখছো। মেয়েরাও ভীষণ এগিয়ে এসেছে। হয়তো উত্তর বঙ্গ একদিন কবির দেশ হবে। দেশ মানে ভূখন্ড, কবির আবাস।
র : নতুনদের কী বলবে?
অ : পূর্ববর্তী সব কবির কবিতা পড়া এবং কোন কোন বিষয়ে কাজ হয় নি সে বিষয় গুলো নোট করা। ছন্দ কিছু আয়ত্ত করা। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা। এবং লিখে যাওয়া।
র : আগামীতে তোমার বই পাব!
অ : কবিতা রেডি। করোনা কাল কেটে গেলে ট্রাই নেবো
র : আগাম শুভেচ্ছা রইল!











4 মন্তব্যসমূহ