অন্য ভাষার কবিতা
চেন শিউইউ-চেন'এর গুচ্ছ কবিতা
চেন শিউইউ-চেন তাইওয়ান’এর একজন প্রক্ষ্যাত কবি। তমকাং বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা সাহিত্যে স্নাতক। তিনি চাইনিস একাধিক পত্র-পত্রিকায় সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন, এছাড়া
“লি পোয়েট্রি সোসাইয়টি’’ র অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়।
শিউইউ-চেন’এর
লেখা কবিতা এতিমধ্যে আলবেনিয়ান, তুর্কি, রোমানিয়ান, হিন্দি, নেপালি, সিন্ধি, জাপানি,
ভিয়েতনামী, হিব্রু, পোলিশ, কাতালান, সার্বীয়, আরবি এবং অন্যান্য ভাষাতে অনুবাদ করা
হয়েছে।তিনি ২০১৫ ~ ২০১৯ সালে তাইওয়ানের ফর্মোসা আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে আন্তর্জাতিক কবি-সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা দিয়ে আলোড়ন তৈরী করেন। অন্যভাষার কবিতার এই পর্বে পাঠকের জন্য চেন শিউইউ-চেন’এর এক গুচ্ছ কবিতা রইল।
শীত
তুষার পাতের জন্য
পাতাগুলো জায়গা ছেড়ে দেয়
সমগ্র পাহাড়ও
পাখির সীমাহীন স্বাধীনতা
পাখিদের ইচ্ছে মতো খাওয়ার স্বাধীনতা আছে
যেকোনো প্রান্তেই বসার স্বাধীনতা আছে
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গান করার স্বাধীনতা আছে
ক্ষমতার সামনে নৃত্যের স্বাধীনতা আছে
পাখিদের যেকোনো দৃশ্যের ওপর হাগুর স্বাধীনতা আছে
বাতাসে ও ঢেউয়ের গতিতে চলার স্বাধীনতা আছে
সুদূরে তাকিয়ে থাকার স্বাধীনতা আছে
দুর্বল পায়ে হাটার স্বাধীনতা আছে
নিজেরই চঞ্চু দিয়ে পালক খুবলে ফেলার স্বাধীনতা আছে
পাখিদের ভালোবাসা,
অপমান ও অবজ্ঞা ভুলে থাকার স্বাধীনতা আছে
ওঃ পাখি
ওঃ মুক্ত পাখি
তোমার স্বাধীনতা ভুলে যাওয়ার স্বাধীনতা আছে
নেরুদার আকাশ
বাতাস একটা পাতা ছিঁড়ে দাও
শরতের পত্র এসেছে
তোমার একশ প্রেমের কবিতা শুনে
আমার মন বিষণ্ণ হয়ে আছে
বসন্ত অনেক দূরে
অথচ আমি শুনতে পাচ্ছি
কেউ ডাকছে
আমার ভেতর লুকিয়ে একটা সমুদ্র
তাইওয়ানের দ্বীপ থেকে
উড়ে যাচ্ছে নেরুদার আকাশে
অনেক উঁচু দিয়ে
কবিতার মতো সনেটের মতো
ও আমার নেরুদা
ভালোবাসার মানুষ
যেন আমাকে ভুলে গেছ ভালোবাসাহীন
কোন এক মে মাসের মতো
নেরুদা
আমি ভীতগ্রস্থ
স্রোত যেভাবে নদী ও পাথরকে
ভালোবাসে
তোমাকে সেভাবেই ভালোবাসি
নিজেকে ভেঙে দাও
তোমার আলিঙ্গনে
তোমার আদরে
আমি একটা নৌকা হয়ে যাই
বাতাস ও মুহুর্ত ছেড়ে দাও
তোমার স্নেহের বন্দরে নামি
তোমার আদরে
আমি শাদা কবিতোর হয়ে যাচ্ছি
সমগ্র আকাশ ছেড়ে দাও
তুমিই আমার ডানা
তোমার আদরে
আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি
তোমার চোখের দৃষ্টি দিয়ে
অন্তহীন রাতে আমাকে সাহায্য করো
তোমার আদরে
আমার সম্পূর্ণ শরীর একটি কানে রুপান্তরিত হয়েছে
আমি পশুর চিৎকার শুনতে চাই না
শুধু তোমার ফিস ফিস শুনতে চাই
তোমার আদরে
আমি বন্দুক ও বুলেট নামিয়ে রেখেছি
তোমার কাছেই শক্তিশালী হাতিয়ার আছে
যা দিয়ে তোমাকে সর্বচ্চ আঘাত করব আমি
ওঃ আমার নেরুদা
আমার সমস্ত জীবন ফুরিয়ে দিয়েছি
তোমার একটু অন্তহীন আদরের জন্য
সানতিয়াগোর চোখ
চোখের নিচেই
সর্বত্র
জেগে আছে চোখ
যেন এক সত্যি ভালোবাসার মানুষ
বাগানের গোপন কক্ষে
পরীক্ষা করছে
ভালোবাসা অন্তহীন কিনা!
যেন কামুক চোখেরা
অন্ধ ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে
ওঃ আমার নেরুদা
যেন অসংখ্য অদৃশ্য চোখ
শুধু চোখ, চোখ আর চোখ
কোনটা আমার
কোনটা তোমার
আমারা কি দু’জনের চোখ দিয়ে
একই তারার দিকে তাকিয়ে আছি?
আমি তোমায় ধরতে চাই
কিন্তু ভয় পাই, যদি
তোমার কাছেই আমি ধরা পরে যাই
কানের দুল
যখন কানের দুল হাড়িয়ে যায়
ঝুমকোরা স্বাধীনতা ফিরে পায়
তবু কেন তোমার কান সময়ে সময়ে
জিঙেল-বেলের মতো বেজে ওঠে?
যখন কানের ছিদ্রে দুল গুলো আটকে দেওয়া হয়
মানে দুলোগুলোকে ভালোবাসার সাক্ষী করা হয়
যদিও তাদের বিচার করার কোন ক্ষমতা নেই
প্রকৃত ভালোবাসার হৃদয়ের কি হবে
সমুদ্র শুকিয়ে যাবার আগে আর
পাথর ক্ষয়ে যাবার আগে
তবু এতো প্রতিশ্রুতি
যখন কেউ মনে করবে
ডাকবে
কান চুলকবে ও ফুলে যাবে
দুলগুলো ব্যবহার করা হোক
বা ফেলে দেওয়া হোক
কান কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি দিন রাত মনে রাখবে
ওঃ আমার নেড়ুদা
প্রতিশ্রুতি হল বসন্তের বাতাস
কানের দুল সারাক্ষণ এরই জন্য অপেক্ষা করে
একটু কেপে উঠবে বলে
1 মন্তব্যসমূহ