জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের কবিতা


জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের কবিতা


জ্যোতির্ময়ের বাসা ধূপগুড়িতে। মূলত কবিতা লেখেন। গদ্য লেখাতেও সমানভাবে পারদর্শী। কবি পড়াশোনার জন্য বর্তমানে শিলিগুড়ির শিবমন্দিরে থাকেন। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় আব্দুল করিম স্যার বাংলা রচনা লেখার হোমটাস্ক চেক করতে করতে বলেছিলেন, তুমি তো কবিতা লিখতে পারবে! কার্যত ওই মুহূর্তটির প্রতি ঋণ পরিশোধের জন্যই, জ্যোতির্ময় বলেন- ওর এই লেখালেখি। সম্পাদনা করেছেন 'উতল হাওয়ার দিনে'। জ্যোতির্ময় যত কম লেখেন, তারচেয়ে বেশি মুছে ফেলেন। ভালোবাসেন গান গাইতে, শুনতে ও গাছ দেখতে...

                  

প্রকাশিত দুটি বই:

১. তুমি একটা অপরূপ মানুষ, পত্রপাঠ, ২০২২।

২. অশ্রুভাবনাগুলি, যাপনচিত্র, ২০১৯।

 


কবিতা

বিবাহ সংক্রান্ত দু’টি স্বপ্ন

আমার আগে তোমার বিয়ে হয়ে যাবে

আমি বিয়ে করব না

শীতবস্ত্র পরিধান করে যাব আমি মানুষের

বিয়ে খেতে

আমাকে চেনা লোকে জিগেস করবে, কি খবর, তোমারটা কবে…

আমি বলব, করব দেখি

অথবা, সুযোগ বুঝে আসল কথাটা বলে দেব।

 

স্বপ্নে কি অনর্থ ঘটে

স্বপ্নে আমার স্ত্রীর তোমার ওপরে একটু মায়া পড়ে যায়।

বলে, ‘দ্যাখো, কাজল পরেছে…।’

আমি তার কথার একটা বাঁকা অর্থ করে, স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসি।

 

স্বপ্নে যে কি অনর্থ ঘটে

মণ্ডপের পিছনে, বুকে তীর বেঁধা একটি মানুষ

ছুটে চলে আততায়ীকে ধরবে বলে

আর তার ফলে

দূরে দাঁড়িয়ে থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আমার।

 

আবার, কি অদ্ভুত, ঘুম ভেঙে মনে পড়ে তোমার কথা।

 

 

 

আড়াল

 

কতকিছু লিখেছ, কেবল কবিতা ভাললাগে—এইটুকু বলার জন্য

সিনেমার কথা এনেছ, বইয়ের পাতায় গাছের পাতা রেখে

দীর্ঘকাল ভুলে যাবার কথা

আর আমি, দেখোকত সংগ্রাম করলাম সারা বিকেল জুড়ে

তবু, কি আমার ভাললাগে এই কথাটুকু সোচ্চারে বলতে পারলাম না।

 

 

যুবকের সাথে কথোপকথন- ১৬

 

ক’জনের মধ্যে তোমাকে দেখি

যদিও জানি একথা যে—

কয়েকজনের মধ্যে তুমি থাকবে না

তুমি থাকবে রাত্রি জেগে

অস্বচ্ছ আলোর ভোরে, ছাদে, তোমার খালি পা

দূরবর্তী প্রদেশে তখন সাপের উপদ্রব

তুমি তখন, সারাজীবনের মৃত্যু ঘটেছে

এরকম আন্তরিকভাবে বুঝে, ঘরে আসবে ফিরে…

 

ক’জনের মধ্যে তোমাকে দেখব

জানব না তোমার যে একটি মৃত্যু হয়ে গেছে।

 

 

যুবকের সাথে কথোপকথন-১৭

 

প্রথমদিকে আমরা ছিলাম আকাশে

প্রতি রাতে বিদেশে যাই

দরকার একটা দু’কামরাবিশিষ্ট ঘর

বারান্দা না-হলেও মানিয়ে নেব কেননা

আমাদের আস্থা ছিল রাস্তার প্রতি

শুধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণ করব বলে

আমরা ভাবতাম একদিন পালিয়ে চলে যাব দূর দেশে

কখন যেন নেমে এসেছি, মাটি ছুঁই-ছুঁই

গায়ে দেশের গন্ধ আর গায়ে অপরাহ্নের আলো

বাসে করে ফেরা যায়, এতখানি দূরে যেন স্বপ্নগুলো থাকে

জামার ওপর ফুলের কারু আমার এবং তোমার

বুকের ভিতর দুঃখগুলি ঢাকে।

 

 

বলতে ইচ্ছে হয় তাই বাক্যগুলো মনে রেখেছি

 

কেট উলফের ‘গ্রিন আইজ’ শুনলে আমার মনে হয়

কার্শিয়াং থেকে ফিরছি, আর জিপের জানালায় বসে মনে হচ্ছে

তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না

ইচ্ছে করে তোমাকে ধরে এনে সারাদিন বসিয়ে রাখি পাশেপাশে

দেখো কি পাহাড় দু’হাতে সরানোর কর্মশালায় আমি আছি

অপরাজেয় শক্তি তো নেই

তুমি লক্ষ্য করবে নদী পার হতে হতে বাঘের বন থেকে

ভাঙা ঝরা ডালপাতা আর ঔষধি আনার যে বিষয়টা

কেন ঘুম পায় মাঝপথে, লক্ষ্য করবে

হৃদয়ের বোঝা একটু নামিয়ে রেখে, তোমার ইচ্ছে করবে

হাতে হাত লাগাতে

কিংবা এসো, তদন্ত করে দেখে যাও ক’দিন

সারাদিন সঙ্গে থেকে, কি আবরণ মুছে তোমারই

মুখের দিকে তাকাতে হয় রোজরোজ।

 

 


নকলের লেখা


পূর্ব প্রেম নিয়ে লেখা আমার ফুরোবে না

আমাদের কারুর ফুরোবে না

একই সঙ্গে এই, এবং ওই, অথবা সেইসব হয়ে হয়ে

আমার কত কি হল

অথবা

কিছুমাত্র হল না

তোমার ছোটবেলার ছবি স্টিকার করে রেখেছি

কোনও ক্ষেত্রে কাউকে তা পাঠানো হয় না,

দু'পাশে তোমার বড়রা বসা, পিছনে পাহাড়ি সিনারি, নকল

এত সুন্দর ওই নকলের ডাক

ইচ্ছে হয় আমিও তোমার মতো

অমন নকলের সামনে বসে থাকি

উরুর ওপর রাখি হাত, ডান হাতে নীল চুড়ি...






'তুমি একটা অপরূপ মানুষ', প্রচ্ছদ করেছেন সুপ্রশন্ন কুণ্ডু। patrapath.com -এই ঠিকানায় বইটির খোঁজ করতে পারেন। মূল্য ১৬০ টাকা।

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ