বিপ্লব সরকার, পেশায় শিক্ষক, নেশায় কবিতাসন্ধানী ও আড্ডাবাজ। ভালোবাসেন অনুবাদ করতে। কলেজ জীবন থেকে কবিতায় হাতেখড়ি হলেও মূলত ২০১৪ থেকে বাংলা কবিতায় তাঁর আত্মপ্রকাশ। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে "ওঁ চিহ্নের সন্ধি(২০১৭)", "চাপা পড়ে আস্ত শহর(২০১৮)" এবং "ভিতরে ভিতরে শিল্প হয়ে গেছে(২০২৩)"। এছাড়া রয়েছে কবি সন্তোষ সিংহের "স্বপ্নের কবিতাঃসূর্যাস্তের ভাষা" কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ "Poems of Dreams, Language of Sunset(2020)"। মূলত বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে কলম ধরেন। বাংলা কবিতার বিশৃঙ্খল বিচরণভূমিতে নিজস্ব শীততীব্রতা নিয়ে আড়ালে শব্দ বুনতে ভালোবাসেন বিপ্লব।
কবিতা
যবনিকা
গ্যালাক্সির গোলকধাঁধা
থেকে বেরিয়ে এলো বিপ্লব
সংগ্রামটা নিজের সঙ্গে
একটা অপঠিত পাতার হলুদ
দাগ বুকে মাখা
ছিল। আছে
পরবর্তীতে হারিয়ে যাওয়া
ইতিহাস হতে চাওয়া
আপাতত শেষ নির্যাসটুকু
নিংড়ে
অকালবর্ষণ রোধ
আর দীর্ঘ মায়াপথ হেঁটে
এসে --- যবনিকা
রাস্তা
রাস্তা নিজেকে চেনে
গন্তব্য তার আপন মায়ের
সন্তান
বাঁকের পর বাঁক জুড়ে যায়
থাকেনা তার রাস্তা হারানোর
ভয়
আমি সেই রাস্তার সাথেই
শরীর-শরীর
খেলতে চাই
বহুমাত্রিক পরিধি
বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়ুক বন্যার
জল
এসব খড়কুটো বিলাসীতায়,
আর
কোন শ্বাসবায়ু নেই
ম্যাতস্যন্যায়ের দেশে পরাধীন
কবি
লেখে হা-হুতাশ
একটি কবিতার চেয়ে দু’মুঠো
ভাতের
পরিধি --- বহুমাত্রিক
অলিখিত চিরকুট
প্রেম পরিপূর্ণ না হলে
কেঊ জানবেনা
তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।
কেউ জানবেনা
তুমিও কবর দিয়ে রাখবে
--- একটি খসড়া উঠোন
শুধু আমাদের অদৃশ্য বিকেল
থেকে মাঝে
মাঝে ডুকরে উঠবে কিছু ভেজা
ছিন্নপত্র
বাঘ
ক্রমশ, প্রশ্নপর্ব পায়ে
পায়ে
তাই ভয় পাই আজকাল
প্রতিটা পদক্ষেপে গভীর
খাত ওত
পেতে থাকে
আমার হরিণ বোনেরা টিউশন
যায়
ওদের ছড়ানো চুলের গন্ধে
বাঘ জেগে ওঠে
প্রেম ও প্রতীক্ষা
একঘেয়েমি কাটাতে একটু বিরতিপর্ব
হোক
প্রেমের ভিতর গানের কথা
জমতেও
রোদ ও বৃষ্টি চাই। কিংবা
–
একাকী ঘড়ির দিকে বারবার
চেয়ে
দেখতে দেখতেও তো অনুভূতি
ঘন হয়
শ্যামলবর্ণা
মাঝে মাঝেই আমার শ্যামলবর্ণা
প্রেমিকার কথা
মনে পড়ে। কখনও কখনও দেখি
ওঁর চুলের ঘনত্বের
চেয়ে ঢের কালো পুষে রাখে
আমাদের লালিত
আত্মানুসন্ধানগুলো। অথচ
যখন কালো পালকের পাখিটিকে
জমিয়ে রাখতে দেখি মেঘ,
তাঁর রক্তিম ঠোঁটের পর্দায়,
কিছুটা হলেও অন্ধকার হাতড়ে
খুঁজে পাই চেনা সুড়ঙ্গ
নিমিষেই শিথিল হয় অমানিশা
ও আমাকে আদরে রাখা
গুল্মলতা
লিভার
কল্পনা লিখতে এসে ভেবেছিলাম
স্বয়ংসর্বস্ব
হয়ে উঠব না
বাস্তবতা লিখতে এসে ভেবেছিলাম
স্বয়ংসর্বস্ব
পুরনো সেই রেডিওটা বইবো
না কাঁধে করে
জীবন আমাদের জন্য অনুস্বারবর্জিত
কোন
অক্ষর রাখেনি
প্রতিটা দিন হাওয়া ভরতে
ভরতে, ভরতে ভরতে
লিভার নেমে পড়ে কল্পনার
নীচে, বাস্তবতার নীচে
অতএব অনুস্বার --- এর উপরে
পাপ
গামলাভর্তি তিনদিনের বাসি
দুঃখ
ঢেকে রাখা হত
উনুনের উপর শুকনো কড়াই,
পুড়তো
ঘাম ঝরানো লম্বা দীর্ঘশ্বাসগুলো
খিদে পেত না। পেলেও দাসী
মা তাঁর অশ্রু
মিশিয়ে বেড়ে দিত পান্তাসুখ
এমন উৎসগত অসুখের বাস্তুতন্ত্র
থেকে
তোমার জন্য একফোঁটা সঙ্গীত
চুরি
ঘুম ভেঙে জেগে উঠে দেখি
বুকে পাপ
লেগে আছে
সবুজ সংকেত
কোন কোন চাঁদের আলো দুঃখের
নদী হয়ে ওঠে
চোখের ভিতর থেকে ঝর্ণা
হয়ে নামে
নেমে গেলে সব ভার হালকা
হয়
মেঘের ভিতর কিছু গূঢ় রসায়ন
অগোচর থাকে
২
ছেলেটি চাকরি পায়নি বলে
বর্ণমালা থেকে অক্ষর খসে
পড়ছে
শব্দবিহীন তাঁর ভাষাধ্বনি,
যতিচিহ্নটুকুও ঈশ্বর
ভুলে গেছেন বসাতে
ছেলেটি চাকরি পেয়েছে বলে
লুব্ধকর সবুজ সংকেত আসে
মাত্রার নীচে ব্যঞ্জনধ্বনি,
অক্ষর হয়ে উঠতে উঠতে
কী যেন অধঃক্ষিপ্ত রেখে
যায়
৩
কোন এক বান্ধবীকে অংকের
মতো চাই
কোন এক বান্ধবীকে কবিতার
মতো
কবিতায় ছন্দ জরূরী নয়,
ভাবটুকু থাকে
অংকের ভাব বলে কিছু নেই…
একটা পরিণতির দিকে ধাবমান
হওয়া যায়
প্রতিমা
ভাষার কোন জাত নেই
জননী তার আলুথালু শাড়ি
পরে
পাটের বেড়া ও টিনের চালের
ছায়ার নীচে
আলুসেদ্ধ ভাত রাঁধে
খিদে পেলে ভাব মেশাই, তা
দিয়ে শিল্প বানাই
শিল্পের বরং ভাষা থাকে;
থাকে বিশেষণ-যোগ
আবরণবর্জিত সুসজ্জিত এক
মূর্তিমান প্রতিমা
দূরবীণ তার ওজনমাপক যন্ত্র
সম্পর্কের ভিতর
সম্পর্কের ভিতরে একটা পাখি
থাকবে
সম্পর্কের ভিতরে থাকবে
পাখির মাঠ
--- এমনতর অক্ষরের ভিতর
নড়েচড়ে বসত
নদীকথা
সম্পর্কের ভিতর একটা থাপ্পড়ও
খুব
জরুরী ছিল
জরুরী ছিল কেন্দ্রাভিমুখ
ঘূর্ণবাত
খুব ভালোবাসলে, কিংবা খুব
সন্দেহ জাগলে
জানা যায় ---
একটা থাপ্পড় পড়েনি বলে
কত কত ফুলের
ভিতর ঘুণপোকারা
দূরত্ব ও কাছে থাকার মধ্যবর্তী
মানচিত্র
খুবলে নিয়েছে
0 মন্তব্যসমূহ