জগদীশ আসোয়ার'এর কবিতা

 

একগুচ্ছ কবিতা

জগদীশ আসোয়ার

জগদীশ আসোয়ার’এর জন্ম ১৯৫৯ সালে, কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ভোগরামগুড়িতে। কর্মজীবন কেটেছে শিক্ষকতায়। নিজের খেয়ালেই কবিতা লেখা, প্রচার বিমুখ মানুষ, লেখার পাশাপাশি গান গাওয়া তাঁর অন্যতম শখ। ইতিমধ্যে প্রকাশিত ‘ছিন্ন তবে ভিন্ন নয়’, ‘মেঘ ও মানুষ’- কাব্যগ্রন্থ থেকে কবির কিছু কবিতা পাঠকের জন্য রাখা হলো।


প্রথম প্রকাশ : বৈশাখ ১৪১৯
প্রকাশক : দিবা রাত্রির কাব্য
মূল্য :  ৬০ টাকা 


প্রথম প্রকাশ : কলকাতা বইমেলা, জানুয়ারি ২০১৪
প্রকাশক : দিবা রাত্রির কাব্য
মূল্য : ১০০ টাকা

কবিতা

ইতিহাসের কান্না

 
হেঁটে যাচ্ছে দিনগুলো। ইনবক্সে ঢুকে যায় রাতের মেসেজ। সরাসরি। এর চেয়ে বেশি
ভালো থাকা? অসম্ভব। তবু ভালো নেই। একেবারে ভালো নেই। খবর যখন আসে
হেডলাইনগুলো শাণিত বুলেট হয়ে যায়। নিরাপত্তা শব্দটাই কম্পমান ঝড়ের প্রলাপে।
উন্মাদের মতো হাওয়া আচমকা ছুটে আসে। হিতাহিত জ্ঞান প্রতিদিন দগ্ধ হয়। বিশুদ্ধ মানুষ
অসহায়। হিংসা আর প্রতিহিংসা দিয়ে যে বৃত্ত রচিত হয় তার থেকে মুক্তি নেই জেনে কাঁদে
ইতিহাস।
 
 
 

 
নষ্ট চাঁদের আলো

 
ওঠো, জাগো। গহীন রাত। এই তো সময়। কোথায় যেন যাবার কথা। নষ্ট চাঁদের আলো
পড়েছে পৃথিবীতে। শিস দিচ্ছে সে যেন। শুনতে পাচ্ছ। ঠিক এই সময় কারও কারও শরীরে
মহুয়া ফোটে। নষ্ট চাঁদ তাকে ফুটিয়ে তোলে। ম ম করে চারদিক। মাতাল হবে না? মরবে
না? এটাই তো মরতে মরতে বাঁচার সময়। যে ওয়েবসাইটটা কোনোদিন খোলে না, বনজ্যোৎস্না
ডাকলে সেটাও খুলতে পারে। বাদুড় উড়ছে এদিক-ওদিক। রাতে ওদের দৃষ্টি খুলে যায়।
তপ্ত প্রশ্বাসে কেঁপে উঠছে গাছের পাতা। শরীরের সির সির ভাবটা তার জন্যই। ওটা
বোধকরি একটা ক্লাইম্যাক্সকে খুঁজে বেড়াচ্ছে অন্ধের মতো। সব আলো নিভুক। বাঁশি বাজুক
তালে তালে। এখন অথৈ রাত। থই থই জলে দৃশ্যমান শুধু নষ্ট চাঁদের আলো।
 
 
 
 
 

লাইনে দাঁড়ান

 
এলোমেলো হাঁটি সারাদিন
নির্জনতা খুঁজি
ভিড় করে হাজার মানুষ
আমি চোখ বুঁজি
কার কথা কোথায় রেখেছি।
স্মরণে আসে না
অগত্যা ওড়ে মৌমাছি
তার সাথে কিছুকল্পনা
সুযোগের অপেক্ষায় থাকি
রক্তেও এসে যায় টান।
অনেক মানুষ বলে ওঠে
দাদা, লাইনে দাঁড়ান
 
 
 
 

একটাই বাড়ি

ভাই সন্তু, আজ এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় যাচ্ছি। যাচ্ছি আর কোথায় – এখানেও
আমি ওখানেও আমি। আমি থেকে কি আমিতে যাওয়া যায়? আমরা অকারণে – যাই যাই
করি। তবে হ্যাঁ – প্রতিবেশটা পালটায় এই আর কি। আর পালটালেই বা কী? প্রতিবেশের
সঙ্গে একাত্মতা কই? হয়তো-বা আছে কোথাও। খুঁজে দেখতে হবে। আচ্ছা সন্তু, বাড়ি তো
একটাই হয় নাকি? দৈহিকভাবে যেখানেই যাই শিকড়টা বোধ করি থেকে যায় এক জায়গাতেই।
অন্তত আমার তো তাই মনে হয়। স্বপ্নলোকটাকে যদি মস্ত বটগাছ ধরা হয়, চারধারেই নামে
তার ঝুরি। স্বপ্নের চরিত্রগুলো কোনো না কোনোভাবে লেপটে যায় তাঁর সঙ্গে। একটা কেন্দ্র
ঘিরেই সেটা হয়। ওরই নাম বাড়ি। তুমি যেখানেই যাও অবশেষে ফিরতে হবে ওখানেই।
‘সব পাখি ঘরে ফেরে’। মানুষও তাই। সন্তুরে, তোকেও ফিরতে হবে গাঁয়ে।




অন্ধ বৃন্দাবন

কাল রোববার। তাও নেই ছুটি। কিছু কথা চুপ। মাছরাঙা পড়ে জলে – ঝুপ। উহ্য থাকা খুব
কষ্টকর। যত্নে বাঁধা ঘর আছে কিছু। লেগেছে আগুন। তাপ লাগে গায়ে। পায়ে পায়ে তবু
ঘাস। বারোমাস ডুবে থাকি জলে। হেঁটে হেঁটে হাটে যাই। ছাইরং স্বপ্ন দিয়ে যাওয়া। হেঁকে
যায় হাওয়া দূরে কোথাও। আকাশের চাঁদ ডুবে যায়। তাও কিছু জ্যোৎস্না পড়ে থাকে।
তাতেই মগ্ন থাকে মৃত মুখগুলো। উড়ে যায় আত্মভোলা ধুলো। কিছুই বলার নেই। কিছুই
করার নেই। বৃন্দাবন অন্ধ হয়ে যায়।
 
 
 

হেমন্তের রোদ

 
হৃদয় শুকিয়ে নেওয়া ভালো।
আমার হৃদয়
শুকোতে দিয়েছি বারান্দায়।
ঝুলে আছে গামছার মতো।
হেমন্তের রোদ, আহা!
এমন রমণী কোথা পাব!
কুয়াশার চাদর সরিয়ে শুধু
মৃদু হেসে যায়।
শরীরের ওম দিয়ে
মমতায় মাতায় শরীর।
মাথার উপর তাও ধোঁয়াটে আকাশ,
মৃত্যুর মতো…
 
 
 
 

মেঘ ও মানুষ

 
মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় মেঘ
বৃষ্টি হয়, নিঃশব্দে শব্দের ফোঁটা পড়ে
আত্মভোলা স্মৃতির বিস্মৃতি ভেজে জলে
নির্জন হাওয়ায় উড়ে যায় নীলকণ্ঠ পাখি
এ এক আত্মার কথা বিশুদ্ধ ধবল
যার বলে বলবতী মানুষী পৃথিবী
ক্রমাগত ঘাতে আর প্রতিঘাতে আবর্তিত হয়
এরইমধ্যে বিনশ্বর দেহ রেখে কবি
চলে যায় হয়তো-বা ভিন্ন প্রতিবেশে
রয়ে যায় মানুষের কাছে মেঘজল তার
 
 
 
 
 

অসময়

 
কেউ নেই। কথা নেই আর। বড়ো অসময়ে এলে। ধান পাকা শেষ হল। বিকেল এখন।
আজ হাটবার। খা-খা বাড়ি। পাকা ধান পড়ে আছে। উড়ে গেছে সুপারি-বাগান। জল।
নেই। অভিমানে নদীও গিয়েছে সরে। শাঁখা নেই। খালি হাত। শুয়ে আছে উঠোনের কোণে।



মরে যায় জীবন্ত মানুষ


না বুঝেই বলে দাও
- না
মরে যায় জীবন্ত মানুষ
কী করে বোঝাব আমি
স্ফুরণের বিন্দু খুঁজে পাওয়া
    প্রতি দিন
    প্রতি রাতে
বস্তুত নবজন্ম লাভ
যেখানে বিষাদ যায় উরে
    উতল হাওয়ায়
    চমকায় ঢেউ
সেখানেই যাই আমি
তোমাকেও নিয়ে যেতে চাই
    অন্যথায়
    অবসন্ন মন
কেবল মাছির মতো 
    করে ভন ভন
     স্তব্ধ হাওয়ায়
তাঁর সঙ্গে ভৌতিক ছায়াদের দল
    স্থির হয়ে থমকে দাঁড়ায়
না বুঝেই বলে দাও
- না
মরে যায় জীবন্ত মানুষ
 
 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

edvardlascala বলেছেন…
No Deposit Slots Casino 2021 | The Most Trusted Guide To
No 1xbet deposit bonuses can be given to new players 바카라 필승법 in order to play 63카지노 for real money or for free and to cash out real 메리트카지노 쿠폰 money prizes. 온카지노 역사