সুজিত অধিকারী'র কবিতা



ডাউন ট্রেনের কামরায়

সুজিত অধিকারী

প্রকাশক : পাঠক
প্রথম প্রকাশ : কলকাতা বইমেলা ২০১৫
গ্রন্থস্বত্ব : সংস্কৃতি অধিকারী
প্রচ্ছদ : দেবাশিস সাহা
মূল্য : ১০০ টাকা
            সুজিত অধিকারী, জন্ম ২৮ শে নভেম্বর ১৯৭৫ সালে, কোচবিহার জেলার নিশিগঞ্জে। কলেজ জীবন থেকেই কবিতা লিখলেও প্রকৃত সাধকের মতো কয়েকজন ছাড়া কাউকেই জানতে দেননি। তাঁর নিভৃত চর্চা পাঠককে সহজ কিন্তু কঠিন সত্যের সামনে এনে দাঁড় করায়। সুজিত প্রথমে ইটাহার ও পরে মাথাভাঙ্গা হাইস্কুলে সহশিক্ষকের ভূমীকায় কর্মজীবন কাটিয়েছেন । ২০১৪ সালে কবি চলে যাবার পর দাদা অজিত অধিকারী তাঁর একাধিক পান্ডুলিপী গ্রন্থের আকারে প্রকাশ করেছেন, যা ইতিমধ্যে পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। 'ডাউন ট্রেনের কামরায়' গ্রন্থটি তাদের মধ্যে অন্যতম একটি। 




কিংবদন্তি 


জোড়া পুকুরের মাঝ রাস্তায় বসে 
আমি বলেছিলাম, তোমাকে কিংবদন্তি করব
তুমি বললে, জল ছাড়া মাছ বাচে না
আমি গোটা সন্ধ্যাটিকে বগলদাবা করে 
ঘরে ফিরে এলাম।                                                  
গাছ, পাখি, ব্যাকটেরিয়া বায়োজীবী সব
পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। 
তারপর একদিন সব চেতনা অনুষঙ্গহীন হলে
তুমি মিনিবাসে উঠে বসলে-আর ফোন করব না
তারপর সুইচ অফ্... 
 
তুমি কিংবদন্তি হলে

 

 

মধ্যরাতের কবিতা

আমাকে, গুপ্তহত্যার আগে

 
মধ্যরাতে বর্ষার তড়িত-কণার মতো
বুকে বিঁধে দিয়ে যাও - ফুল
ক্ষতবুকে আমি তোর্ষার ভাঙন দেখি
নিশ্চুপ বেড়ালের চোখে খুঁজি তোমাকেই
আমাকে গুপ্তহত্যার আগে, ফুল দিয়ো

 

 

ডাউন ট্রেনের কামরায়


সঞ্চয় বলতে আর কিছু থাকল না
যে-ভালোবাসার মনে অহংকার ছিল
আজ ম্রিয়মাণ চোখে
একলা দাঁড়িয়ে আমি ডাউন ট্রেনের কামরায়
পিছনে রেখেছি যত টান-টান ছবি
সামনে অজানা জ্বর,  হকার্স কর্নার
ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে আসে আমার বাড়িতে
শালিক,  বিকেল আর গোপনীয় ঝড়
 
আমি যেন মালি, পরিচর্যা করি ফুলগাছ
সঞ্চয় বলতে শুধু ঘ্রানটুকু আজ

 

পাথর


একদিন আমাকে লোপাট করে নিয়ে যাও
তৃষ্ণার্ত কাক, পাথর ফেলেছি অনেক এবুকে জল নেই,
জলের প্রতিবিম্ব অশ্রুদানা আছে
তাতে ডুব দিয়ে দেখো  কালের গভীরতা 
নিদ্রাহীন চোখে আগুন মেলেছ
একদিন আমাকে লোপাট করে নিয়ে যাও
দৃশ্যমান মরীচিকার হাতছানি থেকে
আমাকে নিয়ে যাও শান্ত দিঘির জলে
যেখানে ডুব দিলে ভেসে উঠবে আমার কবিতা
বুক থেকে নেমে যাবে ভারী পাথর

 

 

বিশ্বাস 

 
আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না
যখন একজন মানুষকে দেখি
ভাবতেই পারি না, মানুষটি কোনওকালে শিশু ছিল
 
এসব বিশ্বাস  ও অবিশ্বাসের মধ্যেও গড়ে ওঠে
সহযোগিতা ও আলাপচারিতা 
 
আশ্চর্য দুনিয়া! 
 
আমাদের চলতে থাকে কার্টুনের বসতি

 

 

চিঠির গন্ধ

 
বুকের মাঝে এক মাহুত হারিয়ে গেল
বনে বনে পতিত জমিতে তার রাত রয়ে গেল
আজা আবার মনে পড়ছে সূর্যমুখী, রাস উৎসব, বোটানি ডিপার্টমেন্ট 
ছুয়ে ছুয়ে কাবেরীর কথা, ভাবাবেগ, হাসি বিনিময়
উত্তরে বারান্দায় এভাবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে
বৃষ্টিতে ভিজে থাকে সূর্যমুখী ফুল
 
এমনই এক আবহ আজ চিঠি এনে দেয়
চিঠির গন্ধে আমি মাতোয়ারা...

 

 

 

ফুলের জন্ম


সত্যিকারের কোনো মানুষের মৃত্যু হলে
ফুলের জন্ম হয়,
গন্ধ ছড়ায় তার বহুদূর বিস্তৃত
ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা আজও
যারা ফাঁকি দিল, রয়ে গেল
যোজন যোজন অনুশোচনার চাঁদ।
ভালোবাসার মানুষ এখনো আছে
যার জন্য থাকি বহুকাল
তার মৃত্যু হলে ফুলের জন্ম হয়।

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Lekha gulo bektigato,
uiseannpacholski বলেছেন…
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।