আশিস দে সরকার'এর কবিতা



রঙের উজান

আশিস দে সরকার

 
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৪
প্রকাশকঃ ধানসিড়ি
গ্রন্থস্বত্বঃ আগ্নেয় দে সরকার
প্রচ্ছদঃ সেঁজুতি দাশগুপ্ত
মূল্যঃ ৫০ টাকা
 ‘ভাষাবন্ধন,প্রেক্ষা’র মতো গুটিকয় পত্রিকা বাদ দিলে আশিসের কবিতা তেমন চোখে পড়েনি। এই কবি নব্বই দশকেই কবিতার সঙ্গে ঘর-গেরস্থালীর শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানিক পড়াশুনায় অমনোযোগী আশিস কলেজের পাঠ চুকিয়ে ফিলম্ শিখতে যান কলকাতায়। কিছুদিন ছিলেন সেখানে। তারপর ভূমিকাহীন আবারও ফিরে পেয়েছেন গঞ্জ ও জনপদ। গান শোনা আশিসের প্রিয় বিষয়। নানা রকম গান।




 
  
 

কবিতা


খোঁজ

 
এসো খুলি রাত
শিস দিচ্ছে রাতশালিক
তেনারা যেভাবে বলবেন,
সেভাবেই দেখব নাকি শিমুলফুল?
বলছি না, লাভা লালেগাঁওতে আছড়ে পড়ুক মল,
শুধু আমার আঙ্গিকে
 
শুরুর আগেই ঝগড়া শুরু হয়
 
এই সেই খুলে দেখার অনুপল
নিকষ কালোয় পা জমির কোন কোণে
সেই একটি জোনাকি
 
 
 
 

 ভবানী পাঠকের কাণ্ড


অনুঘটক তুমি, ডাকিনী
এ অঞ্চল যাকে বলে—ঘটকী
 
এই গাঁ-টেঙ্গনমারি থেকে স্পষ্ট দেখি—
লিল দ্য ফ্রান্স, বিশ্বাস কর।
আব্বাসউদ্দিনের দেশে বেড়াতে এসেছে
পশ্চিমের বখাটে ছেলেমেয়েরা
তাদের মাঝখানে টগর অধিকারী,হরিশ পাল
 
ছুটে আসছে কালো, খয়েরি
ধেবড়ে যাচ্ছে সাদা দেয়ালে
 
ধড় থেকে মাথা ছিঁড়ে নি
লোফালুফি করি ভরসন্ধ্যায়
 
 
 
 

কোনারক


কোনারকে বসে গন্ধ ইতিহাস
    তোমার হুকুম ফোনে।
দেয়ালে আমরা বোঝাই তাহাকে
    কে বলেছে তুমি দূরে ?
ইংরেজি নভেল ব্যাগের ভেতর
    তোমার আঙুল গন্ধ
ইজিপ্টের প্রিন্স হয়ে গেছি আজ
    নশো বছরের সিঁড়ি
কোনারক এসে খোদাই পাথর
    আমাদের খাঁচা ভুলি
মনে করা যাক, কোনো লোক নেই
    চত্বর জুড়ে দু’জন
পাথর গন্ধে বিভাের আমরা
    পাথরে শুনছি গান
 
 
 

দোল


খগেন মাস্টারের নীলুফা না জনান্তিকা ?
পাঠালাম দু’রাতের বাতাস
 
কী তৃপ্তিতে যে এখন খাচ্ছি তিব্বতি মোমো!
খানিক জিরোতে পারছে আমার কালো খচ্চর।
 
এক হাড়সর্বস্ব বুড়ো মোবাইলে
টেপ করছে খাওয়ার শব্দ
 
চেপে বসি খচ্চরে
 
সড়কে সড়কে আজ দোলের চাঁদ
সড়কে সড়কে আজ হোলির গান
 
 
 
 

আপনাকে, জাঁ আর্ত্যুর র‍্যাঁবো


আমার ২২ থেকে ২৬ বছরের ভীষণ রাত্রি
আর আবির ছেটানো ভোরগুলো দিয়ে
আপনাকে ভাবানুবাদ করা হয়েছে।
আমাকে বলতে হবে আজ, আর্তুর র‍্যাঁবো
 
আলকাতরার ড্রামে পড়ে
বেরিয়ে এসে এত যে সাবান মাখলুম
কিন্তু ওই রং
এখন ভালোবাসি।
বলি কোন ভাষায় কিংবা ইশারায় ?
চাষা দেখে, বকচ্ছপ নিয়ে হাটে খেলা দেখায় কেউ
 
আর র‍্যাঁবো, এই ধুতরোর মুলুকে
একটি সালোয়ারের রং মনে আসে, নাকের রিং
দোপাট্টা সরে গিয়ে ভীষণ অক্সিজেন-অঞ্চল
 
বড়ো কালো হয়েছি, বুঝলেন।
আমার শব্দ-ছবি বেরিয়ে আসুক।
ফালতু বরের ঘর ছেড়ে
 
 
 
 

এসো


এই শোন হে কুণাল শোন এই মাউথঅর্গান
যে তোমায় ডাকে বায়ু সে থাকে অনন্তের পাড়ে
খাড়া সিঁড়ি ভেঙে আসে ঝোপ, ঘরবাড়ি পেরিয়ে
ডুবে আছি চিঠি এই হাইওয়ে ইন, রোদে, জলে
আচমকা তুমি এলে আলোকিত বেনেময় গঞ্জ
আলটপকা কথা না, তেনারা অনুপ্রবেশকারী
আসতে চায় চারুতে, চেয়ারে আজন্ম বুঁদ, ছক
চিঠি জানে, অসম্ভব। ডাঁটে পরে শাড়ি ধনেখালি
 
কে ডাকে 'মাস্টারমশাই’? বিশ্বাসের খোঁজে ক্লান্ত পথ
মাস্টার নই এখানে, আজ রামধনু পড়াই
 
বেরিয়ে আসি হরপ্পা, প্রাচীন গ্রিসে, মহেঞ্জোদারো
তার অনেক পেছনে চিঠির আগুন আবিষ্কার
আজ জ্বালিয়ে দেবে কি কাপ, খুন্তি, বিস্কুটের কৌটো?
 
তবু চিঠি আসে এই স্বজন ছেড়ে আসা সীমান্তে
চিঠ্ঠি আয়ি হ্যায় চি... ছাপরার ছেলে গায়, শীত
গান ভাসে, ভেসে যায় ঢাকা, দুবাই, কাজাকিস্তান
 
দুটো ইস্কুল দুদিকে রাস্তা মেলানো এখানে গল্প
শ্লেষ ভাঙে মহাকাল, প্রাচীন প্রস্তরে হাতিয়ার
 
বিশ্বসিংহ রোড থেকে দেখি রূপনারায়ণ রোড
বই হাতে সন্ধেবেলা, টাঙ্গাইল, হাঁসপাড়
 
রামখোর সত্যদা গো ওই দ্বীপে ছিল মৌরসিপাট্টা
চেয়েছিলাম মদ, মধুসূদন এল গ্রাম্যতা
আপনি অন্যরকম—সদ্য গোঁফ বলেছে হল্লায়
তারপর কলকাতা, কিড স্ট্রিট, ফিল্ম শেখার চেষ্টা
একঝাড়ে ফিরে দেখি পোস্টার পড়েছে মফস্সলে
একদিন বলা যাবে সেই বন্ধ রাত্রি দিন, চিঠি
 
এক অদ্ভুত চৌমাথায় উট, ঢোলা কুর্তা, সালোয়ার
মেজাজ আর ইমেজ ঝাপি করল যারা, মাউস
তারা থাকে, তারা বোকা নয় এই যুধিষ্ঠিরপুরে
বাজে কথা থাক চিঠি। এসেছ উজবুকের গাঁয়ে
তোমার পাঠানো গন্ধ-চা ধোঁয়া স্বাদ নিতে নিতে
ওই রূপোর গড়গড়া, ঠাকুরদা, আজ শুধু ইট
 
এইসব ঘাম নুন, এইসব ম্লান আলো
        বেঁচে আছে দুম্বা
কাকতাড়ুয়া দেখে ছেলে, মেয়ে দেখে পোড়ো জমি
        ওই হাইওয়ে ইন
ফালুদা পাওয়া যায় তন্দুরি, মুরুগমসল্লম
        শতাব্দী শেষ হয়ে এল
 
 
 
 
 
 

দ্য ভ্যালিজ অব আফরিনা



এখানে এই দুপুরে, সন্ধ্যায় কোনো মোবাইল নেই
অথচ কথা হয় আফরিনার সাথে
 
শেষ দেখা হয়েছিল কাজাকিস্তানের
এক কসাইখানায়।
কথা হয় কথা শোনে রাতের তক্ষক
 
নামহীন নদীপাড়ে কলাই করা বাটিতে সেমাই
সেমাই-এর কিশমিশ
একটি কাক এসে জুটেছিল—উজিরের গুপ্তচর
 
ঢাকা থেকে কলকাতা
কলকাতা থেকে এই পাহাড়ের দেশ
কোথায় গন্ধ নেই ওড়নার ?
সব আতর হার মেনে বসে আছে
এখানে মোবাইল কারিগরি, মাউস কীরকম অপ্রাসঙ্গিক।
 
ওই আবার থেমে গিয়ে শুনছে তক্ষক
 
 

আর কতদূর আফরিনা
চোখে চশমা, ঝাপসা দেখি
 
তুমি কি লাহয়রের কোনো সরাইখানায় এখন
নাকি কলকাতায় ?
তোমার পুঁটলিতে কি আখরোট থাকে এখনও?
 
আমার ঠিকানা এখন সুদখোরের গলি
কতরকম দাঁত আসলে একরকম
 
মাঝেমধ্যে পাহাড়ের হাটে-ফাটে যাই
মােরগ লড়াই দেখি
ভীষণ সত্য এই ব্যাপার দেখায় সময়
 
যদি হাতে দিতে একটি খেজুর
 
 
 

খ্যাক খ্যাক হেসে চলে যাচ্ছে শেয়াল
কী চমৎকার তার হাঁটা, লেজ
 
এসো আফরিনা, এই চরেই বসে পড়ি
খেয়ে নি তন্দুরি, উটের মাংস
পাশের দরিয়ায় নৌকো নেই, না থাকুক
 
খেতে খেতে আমরা গপ্পো করি
মাংস মুখে কীরকম হাসো তুমি আফরিনা
 
এহ চর, বালি আচমকা চোখে পড়া একটি মেটে বক,
কী আর আনতে পারে রসনার চেয়ে বেশি?
 
দেখি আফরিনাকে, চিবোচ্ছে তন্দুরি
-আছে? ছিল কোনোদিন ?
 
 
 
 

বার্তা


তোমার মোবাইল বন্ধ ছিল।
ফলে শহরময় শুধু - কা কা কা কা
 
ছোটো শহরের কোনো কোনো অধ্যাপকও তো
ঈর্ষা করে বড়ো শহরের উজবুককে
তবু এখানে ভোরবেলা গলা সাধে বেলাদি
বন্দর থেকে ডিম বেচতে আসা
ধুরন্ধরকে আরেকবার ফিরে যেতে হয়
এই পিকনিক স্পট থেকে।
 
তুমি মোবাইল খোলা রাখো
টুপি মাথায় ফিরে যাচ্ছে ধুরন্ধর।
চুনাভাটি থেকে বক্সাফোর্টের দিকে
নেমে আসছে দুরন্ত ষাঁড়
তোমাকে ছাড়া এসব বলি কাকে আর






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ