শতানীক রায়'এর কবিতা

 


গুচ্ছ কবিতা

 শতানীক রায়

                শতানীক'এর জন্ম ১৯৯৩ সাল, মালদায়। লেখার শুরু ২০১১'র দিকে, প্রথমবার লেখা প্রকাশ পায়  ২০১৪'য়। প্রানীবিদ্যায় স্নাকত্তর শতানীক মূলত প্রবন্ধ লেখেন, পাশাপাশি তার কবিতার হাতও যথেষ্ট শক্ত। এছাড়া 'জলটুঙ্গি' নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করছেন ২০১৬ সাল থেকে। ইতিমধ্যে পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। তার মধ্যে ‘মাংস মায়া আর আদ্যানদী’ ও ‘ময়ূর কিংবা নীলমণিলতা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবির কিছু কবিতা পাঠকের সামনে রাখা হোলো। 




শূন্যতায় ছেয়েছে শব

 

...when you started not knowing who you were from Adam trying how that would work for a change not knowing who you were from Adam no notion who it was saying what you were saying whose skull you were clapped up in whose moan had you the way you were was that the time...

 

                                          — Samuel Beckett

 

এভাবে মরতে গিয়ে আমি বুকের ভেতর স্বর্গ আঁকি নরক আঁকি আর আমার শবাসন কৃতার্থ করে গাছগুলোকে। অনেকটা দীর্ণ হয়ে ছোটো হয়ে কবিতা লিখে চলেছি। বার বার একই শব্দকে লিখে একই সন্দেহকে ভাঁজে ভাঁজে দংশন করে চলেছি। আমি এমনভাবে মরে যাচ্ছি এমনভাবে জন্মাচ্ছি ডাক ছাড়ছি। নদীর সঙ্গে আলাপ করতে করতে বহু পুরোনো হয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমার অঙ্গগুলো এক-একটা শরীর হয়ে উঠছে...

 

খুব চিন্তার ভেতর ডুবে গেলে আমি ক্রমাগত ঠোঁটের চামড়া টেনে তুলতে থাকি। আনন্দ পাই মূল অভিজ্ঞান থেকে সরে এসে অন্য ক্রিয়ায় মূল ক্রিয়াকে খোঁজা। গভীর কিছুর সমাধান চাইছি। তবে শরীরী কেন? গণেশ পাইনের ছবির মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলাম। তারপর... এটা তৃতীয় কাজ। কাজই বটে। কিছু কাজ আমরা কেন যে করি। অসম্ভবভাবে আমার চরিত্রের বিপরীত। যা সচরাচর করি না তাও করলাম। চরম অনুভূতি। একটু একটু করে শিরা-উপশিরা উপচিয়ে ঢুকে যাচ্ছে জল। সঙ্গে হাওয়া, ধুলো, গন্ধ... প্রথমে একরকম করতে নামি। কোথায় কী যে হয়। সেই যে এক বছর আগে এক শীতের সন্ধ্যায়: এই মহাবিশ্বে আমি কোথায়?

 

দাঁত

ঠোঁট 

ইন্দ্রিয়

মস্তিষ্ক

প্ৰাণ সব মিলে নিয়ে গেল অন্ধকারে...

 


 

ফিরে পাওয়া নদী

 

অনেকটা দিন মিশিয়ে দেখছি রাতও অনেকটা। সাদা পাতার কাছে সোনার সংসার ফুরিয়ে এলে টুকরো টুকরো সাপের চামড়া খসে। ধীরে ধীরে ময়ূর কিংবা নীলমণিলতা... গাছের মতো জীবনে কখনো-বা মানুষ হয়ে উঠি... তন্বী শরীর নিয়ে আমিই-বা কয়টুকু বড়ো হই। কৃষ্ণের কাছে বারবার শরীর রাখার ব্যথা অথবা একটি সরু খেলা... মানুষ যখনই রাতের কাছে পরি হয়সে দেখে তার হাতে মহাবিশ্ব ছাড়া কিছু নই। ধূ ধূ শনিগ্রহ, স্বপ্ন ভেঙে আসা কুবের দেবতা সবই।

 

ঠিক চলে যাওয়ার আগের মুহূর্তে আমাকে নাবিক করে তোলো তুমি... রাম আর লক্ষ্মণের শরীরে না কি শিবের কথা শুরু হয়। কালীকথা হয়। পুরোনো বাঁক। নদীর সেই পুরোনো বাঁক তার পাশে আমাদের ওল্ড মালদা স্টেশন... ছেঁড়া বনজঙ্গল পৃথিবীর রাজা হয়ে ওঠার মধ্যে আবার ফিরে যাওয়া আছে। চলো চলে যাই পাহাড়চূড়ায় অল্প কিছু মানুষ থাকে।

 

এতদিন পরে তুমি এলে। নৌকা নিয়ে এলে সাগরের জল নোনা তাও এলে। তোমার পিতার ঋণ কিছু হলেও মুছে গিয়েছে। রক্ষা করে আসছি বহুবছর থেকে...  এ-নগরীর গুপ্ত আকার আমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আবার নিয়ে যায় ফিরে... পাহাড় দেখতে গিয়ে সমতলের ইতিহাস টানে... ফিরে যাওয়া ময়ূরীর মতো একটু থেমে পিছন ফিরে জল দেখে নেওয়া সম্পর্কের কাছে নদী হয়ে যাওয়া দিঘি হয়ে যাওয়া শব্দ হয়ে যাওয়া... এই শব্দকে আরও ধীরে নীচু হয়ে চাষ করে তোলা আমাদের যৌথ শরীরে কর্তব্যের বোধ জেগে উঠলে মঙ্গলের আরতি দিয়ে দেখলে আবারও ধীবর হও আবার আমাদের যুগের পুঞ্জীভূত পাপ ঘিরে আসে, আমাদের পাপে সমগ্র পাতা পুড়ে যায় আমরা পুড়তে পুড়তে মদের গন্ধ মদের গান গেয়ে যাই

 

বহু কিছু আসে। আয়নার মতো বহু করে তোলা আরকী! এখন তোমাকে সোনা দিয়ে মেপে তোলার শব্দে ক্ষীণ অল্প আলো জন্মায়। তারপর তরঙ্গ জলের আলতো আলতো রেশমের ঢেউ। রেশম খেলে যাওয়া সময় আমাদের ধারণ করুক। কাক আর বকের খেলার কাছে কত পুরোনো নগরী চাঁদ, চাঁদের আরও কবিতা হবে। নক্ষত্রের কাছে আরও সমস্ত ফুল ফল লতিকা খেলে যাওয়া সময়। আহা! মরে যাব না কি আমরা পুনরায়... ঘড়ির জন্য আবার ফিরে যাই। এখানে ভাষার ময়ূর জাগে, এখানে মানুষের শরীর জাগে আস্তে আস্তে নরম হয়ে মিশে যায় সময়

 

হয়তো স্বপ্নের কবিতা লিখছি। লিখেই চলেছি। অনন্ত লিখছি। আকাশ লিখছি। নীলপদ্ম...  জ্যোৎস্নাকামিনী ঊরুর ফুল বা লিঙ্গের প্রতিচ্ছবি। আমাকে আরও বড়ো ধারক হতে হবে ওই বাবার সঙ্গে আজকের অন্তরঙ্গতা চলমান সময়ে রাতের খুব কাছাকাছি বড়োই ছোটো হয়ে গিয়েছি আমি, ধীরে উপরে তাকানোর মতো সময় বলে যা আছে কিংবা নেই। উপরে তাকানো অত বড়ো ঢালু মহাকাশের দিকে এই এখন পুনরায় রেখে দিতে ইচ্ছে করছে সবকিছু। আমার শরীরে যা কিছু চিতার পর্বত বা সময়ের সবকিছু এখানে গচ্ছিত থাক। সখীর কাছে ফিরে যাই। এখানে আমার পুরোনো সখী ছোট্ট একটি ঘরে থাকে। ফিরে এসেছি তার কাছে, ফেরার মতো ফেরা হয়ে ফুল হয়ে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ