তপেশ দাশগুপ্ত'র কবিতা


গুচ্ছ কবিতা

তপেশ দাশগুপ্ত

                জন্ম ২৮’এ আগস্ট ১৯৫৮ সালে, জলপাইগুড়ি শহড়ে। ক্লাস সিক্স্’এ পড়ার সময় মা ও দিদি’র উৎসাহে লেখালেখির শুরু। প্রথম দিকে নিজের মনে লিখলেও পরে সম্পাদক অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রবীর রায়’এর হাত ধরে মেনস্ট্রিমে আসা। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে অভ্যাস করেছেন কবিতা লেখার, ইদানীং তপেশ দাশগুপ্ত উত্তরের অন্যতম একজন লিখিয়ে। ইতিমধ্যে তার পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে - আমার বাদামী বর্ণ গা, তোমার সঙ্গে বদল হচ্ছে, হিট করে নি, হেঁটে ও হাতটান। পুরনো প্রায় সমস্ত কবিতা লক্ষণকে পাশে রেখে একাকী মনোযোগে তপেশ-তার লেখার বিস্তার ধীরে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী করে তুলছেন, পাঠক পড়লেই বুঝে নেবেন।

 


 

জয়ন্তি-৪


দশরথ দাসের নাম শুনেছি গ্রামে পা দিয়েই
চার কোনায় তার চারটে বৌ
তাদের ছেলেরা প্রত্যকেই দশরথ দাস
মারা জানত না বাবার নামে ছেলেদের নাম রাখতে নেই
তারপর দিকে দিকে শুধু দশরথ দাস
রাস্তায় বেরোলেই দশরথ দাসের সাথে
                             দশরথ দাসের দেখা হয়
তারা মারামারি করে হৈ হল্লা করে
অচেনা লোক দেখলেই তার নাম দিয়ে দেয় দশরথ দাস
 
আমি এখন নিজেকে দশরথ দাস বলে চিনতে পারি

 

 

 

খাটে শুয়ে

 
গভীর রাতে
চোখ বুজে শুনেছি
মানুষের কণ্ঠস্বর সবচেয়ে সুন্দর
প্রিয় বৃষ্টির শব্দ শোনার পর
মানুষের কণ্ঠ শুনে
আমার এ বোধ হয়েছে
আশেপাশে ঘুমভাঙা মাঝরাতের কথাগুলি সব
দরকারি কথা
বাসন ভিজে যাওয়া তৈজস ভিজে যাওয়া
ইত্যাদি বিষয়ক গূঢ় কথা

 

 

শীতের সকালে


দাড়ি কাটতে এসে
গালে মাথায় মানুষের স্পর্শ পাই
কৃতার্থ হয়ে উঠি
চুল কাটার ছেলেটিকে
দাড়ির নিচে ব্যাথার গোপন জায়গাটি দেখাই

 

 

মেঘলা দিন শেষ হলে

 
আগেরটুকু না লেখলেই ভালো হতো
এখান থেকেই শুরু হোক
আগের গহিন কথা অনেক গহিন জলের সন্ধ্যাকালিন
সন্ধ্যায় সব মনে পড়ে
দুপুরে সব মনে পড়ে
রাতে ঘুম থেকে জেগে মনে পড়ারা
থাক এখান থেকেই শুরু হোক
মনে পড়া ছাড়া তোমাকে এখানে আনবো কি করে
কাল পরশুর লাল শাড়ী পরা লাল টিপ
আগামীকালও যেন অতীত করে নিতে পারি এমনই অতীতসর্বস্ব
ভেঙে দিতে চাই তুমি এসে কি বলবে একটুও জানা নেই
আমি কি ভাবে জেগে উঠবো মেঘলা দিন শেষ হলে

 


বুঝে নেব


আমি ইলেকট্রিকের তারের উপর দিয়ে বসে আছি
আমার ছাদের নিচ দিয়ে গেছে ইলেকট্রিকের তার
আমাকে যখন কেউ বিরক্ত করবে না আমার অজস্র সময় হবে
কবরের নিচে শুয়ে থাকা হবে
ইলেকট্রিক তারে পাখি বসার মতো ঝুলে থাকতে পারবো
আমি দিয়ে কবিতা লেখা শেষ হবে
ঝুল খেতে খেতে বাতাস লেখবো পাখির উড়ান
মানুষের চোখে যত সুন্দর লাগে
কতটা খাওয়ার অন্বষণে যায় বুঝে নেব পাখিদের হয়ে
 
 
 

কাঠের বাড়ি


খাতা টেনে বার করে আনতে যেটুকু খাটনি
তার উপরে বসে থাকো
পেনের ডগায়
পিভট হয়ে
চক্রাকারে ঘুরে আসা হয়
ঘুরতে ঘুরতে ভগবানগোলা ইতুদের বাড়ি
সেলাই মেসিন কাপড়ের টুকরোর স্তুপ ঠেলে বেরিয়ে
বসে থাকা হয়
টান মেরে ছিলার মতো বার বার বের করে আনা
খাটনির মতো 
 


শালুক ফল


সহজ কথার পথ ভিন্ন নয়ানজুলিতে 
শালুক ফুল ফুটে থাকা
সহজভাবে আছে মানুষ তুমি গিয়ে ফেটে পড়লে
সহজ ফেটে পড়া সহজ ভাবে
অসহজগুলো দুমরে মুচরে
একা করে তুমি একা সহজ হয়ে মানুষ হয়ে পারছ কই
জটিল হয়ে সহজ কথা বলো সরল হয়ে সহজ কথা হয় না
যাতে করে দ্রিমি দ্রিমি মাদল হয় কেঁপে কেঁপে
কাঁপার থেকেই তো শব্দ
ফেটে পড়লে যে কাঁপন হল
শব্দ হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে দেখ নয়ানজুলি পেরিয়ে
 
 

মেটালিক 


মিথুন মিথুন করে গোলাপি গাল গোলাপি গালে গলে পড়ে
শরীর
এইটুকু নিয়ে সারাবেলা একটা গাছ মনে করতে চলে যায়
মেহগনি
ঝিরঝিরে হাওয়া উঁচুতে বয়

 

 

কৃষ্ণচূড়ার কাছে


ডাক্তারের কাছে যাবো
ব্যাথাটা কোথায় বুঝে নিতে চাচ্ছি
ছড়িয়ে থাকা থেকে গুছিয়ে একখানে আনা
শ্যেল ফাটাবো
কত দূর দূর থেকে তার প্রস্তুতি নিয়ে আসা
মনকে নাড়াচাড়া নাড়াচাড়া করে ঝাঁকিয়ে ঐ মুখ
জার ভর্তি রঙ ছুঁড়ে দেওয়া অবয়ব পেতে
মুখ ফুটে ওঠা গড়িয়ে যাওয়া রঙের থেকে

 

 

হিরন্ময় 


মাঝরাতে ট্রেনের হুইশেল্ দূর থেকে
এত করুণ করে বাজে কেন
ট্রেনের ভিতরে যে শুয়ে থাকে
শব্দের সাথে সাথে
শব্দ শুনতে শুনতে দূরে চলে যায় 
 
 

 

হরিণকে দিয়েছি প্রপাত


আমি কবিতার সামনে বসি
আগে বসতাম না এখন বসি
মনে হয় একটু সাধ আহ্লাদ করি
পায়ে ধরে থাকতে বলি
আগে মনে হতো না এখন মনে হয়
দুর্দ্দার আসতো যেতো ভাঙতো চুড়তো
কেঁদে ভাসাতো মটোরসাইকেলে যেতে যেতে পড়ে যেত
শাসন না মানা জল্হাদের মতো মাথা কেটে নিত
এখন মেঘের কোলে হেসে উঠলে তাকে দেখি
ঘাসের সবুজে চিকন লাগলে জলের বাহার হলে
মাথা আগিয়ে দিই না কেটে নিয়ে যাক বলে
বুক ফাটিয়ে ঝর্ণা নামাই না
হরিণকে দিয়েছি প্রপাত
অরণ্য বিস্তারে

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Aro kichhu Lekha thakle valo hoto. Admin amake santusto korun
Unknown বলেছেন…
Prothom 3Ti kobita amar khub valo legechh.