শান্তনু মিশ্র'র কবিতা



স্রেফ একটা ডেটলগন্ধ

শান্তনু মিশ্র

 

প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০১৭

প্রচ্ছদ       : বাবাই ২
প্রকাশক     : কবিস্টেশন
মূল্য         : ৩০ টাকা
 
শান্তনু মিশ্র, জন্ম ১৯৮৮, মালদা। বর্তমানে রায়গঞ্জ'এ বাস। স্পর্ধা ও স্পষ্ট বলার ভঙি কবিকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। শান্তনু'র  সম্পাদিত পত্রিকা ‘বাউন্ডুলে’, ‘চড়ামচড়াম’ ও 'অভিসন্ধি'।

 

 

স্রেফ একটা ডেটলগন্ধ


দীর্ঘশ্বাস


সারা পৃথিবীটাই বোধ হয়
আগলে রাখা যায়
একটা দীর্ঘশ্বাসের ভেতর
 
উদগ্রীব পড়ে থাকে
আরো কত কী!
বিরক্তি...
তাদের ললিতকলা...
 
স্রেফ এটুকুর জন্যই কি
বেঁচে থাকা যায়?
 

বেঁচে থাকার রসিকতা


কিছু কথার আড়াল ভাঙতে ভাঙতে
সাঁঝ নেমে আসে
নির্জনতায় জেগে অঠে
শ্রেষ্ঠ সড়ক
বাস থামে
রাস্তার ওপাশে জমাট বাধে
সমস্ত রক্তচাপ
তারপর ভগ্নস্তুপ
পেরিয়ে
আরেকটু নত হলে
উত্তাপের কাছাকাছি কে যেন বলে ওঠে –
ত্রিফলা আলোর নিচে কুঁচকে থাকা চোখ
ধৈর্য ধারণ করো
 
নীলকন্ঠ ফুটবেই
 
 

দরজা চেতনাহীন


আমার একটা দরজা আছে
চেতনাহীন
অন্ধকার
কুয়াশার মতো রোগা
 
যতটা এগিয়ে যাওয়া যায়
রাত্রির স্থাপত্য নেমে আসে
 
প্রবণতার বিপরীতে এ-ও এক অভিসন্ধি
 
দরজাটা খোলা
 
 

ক্ষয় 


তোমার ঠোঁটের নির্জনতার নিচে
আমিও রেখেছি
ছেঁড়া
কিছু শব্দ
 
তা দিয়েই
নির্মাণ করো আমাকে
 
সহজিয়া চিহ্ন আঁকো
 
 

আলো জ্বলছে সামান্য


যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না বলে
বাঁচিয়ে রাখেছি
এই রাত এই দিন
 
একটা শান্তভাব আমাকে
জড়িয়ে ধরে আছে
আর
বেঁচে থাকার ভেতর
আলো জ্বলছে
সামান্য
 
 

মুখচোরা, চাপা স্বভাবের বিকেল 


রোদ বৃষ্টি যা-ই হোক
তার গন্ধ দিয়েই রচনা করো
বিপদসীমা
 
কেননা
রাস্তার বাঁদিক ঘেঁসে
একটা সরু বিকেল
একসময় ফুরিয়ে যায়
 
আমাদের দীর্ঘশ্বাসের চারপাশে
কোনো মানুষ থাকে না শুধু
 
 

আমার স্পর্ধার ভেতর


১।
একটা তৃতীয় শ্রেনির জানালায়
গোপন মেজাজের সংকেত রাখে
অবনত দৃষ্টি...
অতিপ্রাকৃত অন্তর্বাসে
উবু হয়ে থাকে ভয়
বাদামী বর্ণের সুরে
 
২।
অর্থাৎ,
দীর্ঘশ্বাসের পর যে ঠোঁট
গোড়ালী অবধি নেমেছিল
আমি নয়
বরং বৃষ্টি জানে বিস্তারিত
 
৩।
বৃষ্টির মতো চুম্বন নামালে
অকপটে বলে ফেলা যায়
আমার স্পর্ধার ভেতর
কতখানি আঘাত আসলে
পাথর হয়ে আছে
 
৪।
আপাদমস্তক দগ্ধ করেছি যাকে
বিচিত্র মুদ্রায়
অজস্র পথ তার বেশ ধরে আসে
চোখের কালো ব্যাকরণে
 
 

আগুনকাঠির নিচে


ধ্বংস হবে বলে
একটা টলোমলো আয়নার খোঁজ
তারার সঙ্গে
লম্বা রাতের একটা পাশ...
 
আমরই অতল থেকে উঠে আসছে
আগুন...
অনুভূতির কুয়াশা...
 
শুধু ধ্বংস হবে বলেই
অযোগ্য এই পথ – ভাসিয়ে দেবো
যত রঙিন আয়োজন
 
কতকটা জেগে থাকবো
কতকটা ঘুমের ভেতর
 
আমি শতাব্দীর শেষ গুবরে পোকা
গাঢ় অন্ধকারের মতো
নির্দিষ্ট পরিধি পেলে
স্রোতের বাইরেই লিখে দিয়ে যাব সব –
আকাশ
নাভি
নিঃশ্বাসের শব্দ
 
 

মাস্টারবেশন


স্পর্শ শব্দটাকে
দিগ্বিদিক ভেদ করে
আটকে রেখেছি
 
বয়স্কা অবিবাহিতা শহর
তখন
ধকধক
ধকধক
 
একটা অসহায় মায়াবোধ...
মাস্টারবেশন...
 
আজ কোনো কষ্ট নেই আর
 

 

অশ্রুকালীন


ঠিক যেভাবে একটু করে
জমে জমে ওঠে কাঠ-পলিথিন
 
আমার ভেতর তালসারি আর
নুন জমেছে অশ্রুকালীন
 
 

মোমের আলো


বর্ণনা দেবো না
অথচ গতকাল
একটু একটু করে
খাদের দিকে বাঁক নিয়েছি
 
ইন্দুমাত্র হাতের ছোঁয়ায়
ইহজন্ম অবশ এখন
 
শুনেছি, স্বপ্নের সীমা
আবছা ছাড়িয়ে যেতে পারে
 
ইদানিং
ও-পাশ ফিরো না, স্রেফ
 
পূর্ণিমাতে মুখ রাখো...
মহামান্য, পূর্ণিমাতে...
 
প্লিজ...
 
 

যে হাঁস শূন্যতা লইয়া খেলা করে


পাতায় পাতায় সবুজ সূর্যোদয়... তার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কালো হরফ... এক গ্লাসের
বন্ধুত্ব, আহা। দেশলাইটা?
 
যদি জানতে চাই এত মৃতদেহ আপনার কোন কাজে লাগে? আস্ত একটা পাঁচিল খসে
পড়বে। তখনো হয়তো ডেকে বলতে পারেন, আমি ঐশ্বর্য পেছনে ফেলে এসেছি।
সব।
 
হাঁটু দুটো অস্থির নাড়িয়ে আমার চোখ তখনো টকটকে লাল। আয়নার মুখোমুখি আমি
আমার ভেতরটা অবিকল প্রথম ফুঁপিয়ে উঠতে দেখেছি।
 
ভারতবর্ষের বাঁদিকের একটা গলি, যাকে প্রায় গ্রাম বলা যায় এ-যাবৎ একটা বর্তুল শাদা
দাগও নেই। পুরো মিথ্যের চেয়েও যা বিপদজ্জনক।
 
যেহেতু অঙ্ক শিখিনি, বড়ো বড়ো ক্যানভাস আঁকা শূন্যতা তাই আমার বিষয় নয়। এক্কা
দোক্কা নয় ব্যাপারটা। রণে ভঙ্গ দেয়ার পক্ষে এ যে যথেষ্ট – ‘যে হাঁস শূন্যতা লইয়া খেলা করে সে জানে’।এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত এগিয়ে গ্যাল যারা... ডর কে আগে জিত হ্যায়... তারাও জানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ